A Romantic Gundi Wife Love Story ( রোমান্টিক গুন্ডি বউ প্রেম কাহিনী )
A Romantic Gundi Wife Love Story
( রোমান্টিক গুন্ডি বউ প্রেম কাহিনী )
লেখক .....রাফসান ইসলাম
ওই মামা একটা কড়া করে চা দেওতো। (দিশা)
:- মামনি এত সকালে.? ব্যাপার কি.? (দোকানদার মামা)
:- না তেমন কিছু না একটা চশমাপরা ছেলে এখানে দিয়ে যাবে ওকে নিয়ে একটু মজা করবো আর কী।
:- ওহ আচ্ছা মামনি দিচ্ছি।
বলেই দোকানদার মামা চা বানাতে মনোযোগ দিল আর দিশা ওর বান্ধুবিদের ফোন দিয়ে এখানে আসতে বললো।
ওহ দিশার পরিচয় দিয়ে নেই।
দিশা হলো বাবা মায়ের আদরের বাদর মেয়ে পুরো এলাকা দিশার কথায় চলে। ওর বাবা এলাকার একজন বড় নেতা। তাই দিশা ও এলাকায় রাজ করে। এলাকার একটা ছেলে ও নেই যে দিশা তাকে না জ্বালিয়েছে। কখনো কারো শার্ট রেখে দেওয়া, কান ধরে দাড় করিয়ে রাখা সেটা দৈনিকের কাজ দিশার। একদিন এমন ফাজলামি না করতে পারলে রাতে ঘুম হয়না। তার সাথে তার বান্ধুবিরা ও।
আপনাদের সাথে ওর পরিচয় দিতে দিতে ওর বান্ধুবিরা চলে আসছে।
:- ওই দিশু এত সকালে ছেলেটাকে শাস্তি দিলে কেমন হয় বল। (নিলা)
:- আরে রাখ তোর মায়া। শালা আমার পিছু নিছিলো এখন বুঝুক আমার পিছে ঘোরার মজা (মিথিলা)
:- আহারে বেচারা! ওর কথা ভেবেও কষ্ট হচ্ছে (রাত্রি)
হা হা হা বাকি সবাই হাসতে হাসতে শেষ। রাত্রির কথা শুনে।
:- ওই ওই হৃদয় আসতেছে। (মিথিলা)
:- আরে এই হ্যংলা পোলা তোর পিছে ঘুরে বলোস কি.? (দিশা)
:- হুম রে দিশু একটা বাতাসেই উড়ে যাবে, হা হা হা (মিথিলা)
:- ওকে চল
বলেই দিশা আর তার বান্ধুবিরা হৃদয় এর পিছু নিলো, আর একটু পরেই হৃদয় কে ঘিরে দাড়ায় ওরা সবাই।
:- ওই সুন্দর আলি, আহা! দেখ সুন্দর গাল দুটো মনে হয় এখনি টেনে দেই। (রাত্রি)
:- আহ কি সুন্দর ফিগার মাইরি (মিথিলা)
:- দিশা শুধু একবার বল একে তুলে নিয়ে ওর ইজ্জৎ হরন করি।(নিলা)
দিশা আর ওর বান্ধুবিরা তো হৃদয়কে নিয়ে মজা করতেছে আর হৃদয় তো মাথা নিচু দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর গাল দুটো লাল হয়ে গেছে, ফর্সা গাল এমনিতেই লাল হয়ে থাকে, তারউপর মেয়েদের এমন কথা।
:- ওই তোর নাম কি রে.? (দিশা)
:- হৃদয় আহমেদ। (হৃদয়)
:- বাহ্ হৃদয়, তা হৃদয়ের মাঝে কি মিথিলা ই আছে নাকি আরো কয়েক ডজন মেয়ের বসবাস.? কত্তবড় সাহস আমার বান্ধুবি কে লাভ লেটার দিশ। আবার ওকে টিজ ও করো
:- না মানে!
:- না মানে কি রে.?
:- আসলে মিথিলা আন্টি সরি।
:- কিহ্ শালারপুত আমি আন্টি হা, ঠাসসসস
আর হৃদয় মাটিতে পরে গড়াগড়ি খাচ্ছে
:- ইস্ বেচারা হয়তো আর বাবা হতে পারবে না হা হা হা (নিলা)
:- আরে না আস্তে মারছি প্রবলেম হবে না(মিথিলা)
:- আচ্ছা ওকে রাস্তার পাশে রাখ তারপর চল আড্ডায় (দিশা)
তারপর ওরা সবাই হৃদয় কে একপাশ করে আড্ডায় চলে যায়,
অন্যদিক
:- এই তাহাসান এত সময় ধরে কেউ ঘুমায় নাকি ওঠ, দেখ ১১.৩০ বাজে,(আম্মু)
:- আম্মু যাও না আরো একটু ঘুমাই যাওতো, এত সকালে কেউ ওঠে নাকি। (তাহাসান মানে আমি ছদ্মরূপ)
:- কি বললি এখনো কেউ ওঠে না তাইনা।
:- এই আম্মু তুমি এমন কেনো বলো তো.? আজ শুক্রবার একটু ঘুমাতেও দিবে না হু। প্রতিদিন তো ৬.০০ টা বাজেই উঠি।
:- দেখ বাপ এখন আর ঘুমায় না। একটু পরে তো নামাজ পড়তে যাবি।
তাই এখনি ঘুম থেকে উঠে আমার মোবাইল টাতে একটু রিচার্জ করে আয়,
ওঠ ওঠ
বলেই আম্মু আমার সাধের ঘুম টা হারাম করে দিলো। কি আর করার সাধের বিছানা ছেড়ে উঠে চলে আসতে হলো। কোনো ভাবে একটু মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে পড়ি আম্মুর মোবাইল রিচার্জ করতে।
আর আমার পরিচয় টা দিয়ে নেই।
আমি তাহসান এবার অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র, আব্বু আম্মুর একটাই সন্তান সেটাই আমি। আব্বু দেশে থাকে না ব্যবসায়ের কাজে ১১ মাস ই দেশের বাহিরে থাকতে হয়, আর আমি আর আম্মু বাসায় থাকি। এই এলাকায় নতুন আমরা তবে এখানের চারপাশে আমার প্রায় অনেক আত্মীয় আছে। তাই প্রবলেম হয়না।
এই আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে দোকানে চলে আসি। আপনাদের আমার বাকি পরিচয় টা পরে কোনো একসময় দিব।
দোকান থেকে আম্মুর মোবাইল এ ৯৯ টাকা রিচার্জ করে, আমি একটা চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম, তখনি মনের মধ্যে ললিপক খাওয়ার সখ জাগলো।
:- মামা ৫ টা এলপেন লিভ এর ললিপপ দেন তো (আমি)
:- ওলে বাবুলে এখনো ললিপপ খায় (দিশা)
আমি হালকা মাথা ঘুড়িয়ে দেখি কয়েকটা মেয়ে বসে আছে, সেদিকে খেয়াল করলাম না শুধু ওই কথাটা কে বললো সেটা দেখার জন্য ও দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি তো এই এলাকায় নতুন তাই কাউকে তেমন চিনিনা।
দোকান থেকে ললিপপ নিয়ে ফিরতেই কারো সাথে ধাক্কা, টি-শার্ট পড়া একটা মেয়ে। হয়তো চুল দেখে বুজতে পারছি, সেটা মেয়ে। আর বেঞ্চ এ বসে থাকা মেয়ে গুলো দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি ভয়ে দিলাম এক ভোঁ দৌড়
০২/
এক দৌড় এ বাসায়,
যাক বাবা বাঁচা গেলো না হয় একটা থাপ্পড় নিশ্চিত খেতে হতো চিনিনা যানিনা মেয়েদের সাথে ধাক্কা লাগলে নিশ্চিত থাপ্পড়। এটা সিনেমা না যে ধাক্কা লাগলে ই গান শুরু হবে। বাঙ্গালী মেয়ে বলা যায়না কখন কি করে বসে, তাই দিলাম দৌড়, যাক এখন গোসল দিয়ে নামাজে যেতে হবে, সপ্তাহে এই দিনটাই তো নামাজ পড়া হয়,
অন্যদিকে দিশা তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে ওখানে পড়ে আছে।
:- কিরে ছেলেটা কেরে.? এমন করে পড়ে গেলাম আর সে নিজেই পালালো। একবার তুললোনা,.? (দিশা)
:- ছেলেটাকে তো আগে কখনো দেখিনি এই এলাকায়। (নিলা)
:- মনে হয় নতুন তাই এমন করে দৌড় দিছে। নাহলে তোর সামনে দিয়ে এমন করে দৌড় দেওয়ার মত ছেলে এই এলাকাতে নেই (রাত্রি)
:- হু তাও ঠিক, চেহারাটা নতুন নতুন মনে হয়েছে। ওকে নিয়ে মজা করা যাবে কিছুদিন হা হা হা (দিশা)
:- একটু বেশি হয়ে যাবে না.? ছেলেটার মুখে এমনি ভয় দেখতে পেয়েছি কেমন যেনো ভদ্র টাইপের (মিথিলা)
:- আরে ব্যাস মিথু তোর পছন্দ হয়ে গেলো নাকি, হাবলু টাকে। যে একটা মেয়ো পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে পালায় তাকে, হা হা হা (দিশা)
:- এরে মিথু তাহলে আমার শিমুল দুলাভাই এর কি হবে। দেবদাস হয়ে যাবে যে। (রাত্রি)
:- দূর এসব কিছু না ছেলেটার প্রতি মায়া হচ্ছে না জানি আবার সামনে পড়লে কি হয় বেচারা, (মিথিলা)
:- এই রে বাসায় চল আব্বুর আসার সময় হয়ে গেছে আর এখন যদি এখানে বসে আড্ডা দিতে দেখে তাহলে আমি শেষ, আবার চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিবে। তার থেকে ভালো একটু সাবধানে থাকি (দিশা)
:- হুম আমারো রে। ভার্সিটি তো যাওয়া হয়না, আর যদি একবার আব্বু এসব শুনতে পারে তাহলে সোজা শশুড়বাড়ী, (রাত্রি)
:- এই ওঠ যে যার বাসায় যা বিকেলে দেখা হবে।
বলেই দিশা আড্ডা ছেড়ে বাসার দিকে চলে যাচ্ছে আর বাকিরাও চলে গেছে তাদের নিজ নিজ বাসায়।
দিশা বাসায় পৌছেই।
:- এই আম্মু খাবার দেওনা খুব ক্ষুদা পাইছে। (দিশা)
:- এইযে আসছে আমার মহারাণী, সারাদিন বাহিরে টো টো করে ঘুড়ে বেড়ায় আর আব্বু আসার সময় হলেই ভদ্র মেয়ে। (দিশার আম্মু)
:- এই আম্মু তুমি যানো না কিছুদিন একটু ফাজলামো না করলে হয়না।
:- তো ফাজলামো তো বিকেলেও করতে পারিশ তাই না.? ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হলি ৬মাস হলো এখন ও একটাদিন ভার্সিটি গেছিস.?
:- আম্মু এত বেশি বুঝো না তো চট্টগ্রাম থাকতে অনেক ক্লাস ভার্সিটি, এগুলা নিয়েই থাকতাম, এখন একটু মাস্তি করি তাতে কী হইছে বলো।
:- আচ্ছা তুই মাস্তি কর আমি তোর বাবাকে বলতেছি, তুই এমন করতেছিস।
:- এই না না তুমি আমার লক্ষি মামনি না, আব্বুর কাছে এসব বলে না, আমার সোনা আম্মুটা।
:- তাহলে আমার সোনা মেয়ের মত কাল থেকে ভার্সিটি যাবা কেমন।
:- আম্মু তুমি এমন করতে পারোনা আমার সাথে, আমাকে অন্ধকার চার দেয়াল এর মধ্যে আটকে রাখতে পারো না।
:- আমি তো বলিনি তুই চার দেয়ালের মধ্যে থাক আমি বলছি ভার্সিটি যাবি আর বিকেলে তোর ইচ্ছে মত চলবি।
আচ্ছা তোর ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না আমি তোর আব্বুকে বলছি।
:- এই না আম্মু ঠিক আছে কাল থেকে ভার্সিটি যাব।
:- এইতো আমার সোনা মেয়ে,
:- হু এখন খাবার দেও।
হালকা খাবার খেয়ে দিশা নিজের রুমে চলে যায়, গিয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে ফেবুতে লগইন করতেই সেই প্রিয় লেখক এর একটা গল্প ভেসে উঠে ওর সামনে, আর দিশা মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করে। গল্পের নাম
"বাজে ছেলের ভালবাসা"
গল্পটা পরে একটা ইয়া বড় কমেন্ট করলো। যানে কখনো রিপ্লাই পাবেনা কমেন্ট এর। কমেন্ট টা কিছুটা এ রকমের
এই যে মি. লেখক আপনার সব গল্প ই কম বেশি দু একবার করে পড়ি, ভালো লাগে সেটা না, একদম বাজে হয়। আর মেইন একটাই টপিক নাইকার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেন, বাহ্! সাহস আছে কারো জন্য জীবন দেওয়ার.? আমার তো মনে হয় আপনি একটা ভিতু তাই এমন করে গল্প লিখেন, যেখানে সবসময় নিজেকে হিরু আলম ভাবেন.?
আরো একটা টপিক আছে মেয়েরা সবসময় আপনার পিছে ঘুরে আপনি তাদের পাত্তা দেন না। আসলে কি সেটা নাকি উল্টো.? আপনাকে মেয়েরা পাত্তা দেয়না।
আরো অনেক কিছু পুরো একটা রচনা কমেন্ট করলো তারপর ইনবক্স এ ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে বললো।
" জানি আমি কমেন্ট এট রিপ্লাই আসবে না আর এই মেসেজ এর ও রিপ্লাই আসবে না তাই একটু মজা করলাম যদি বেশি বলে থাকি তাহলে সরি।"
তারপর নেট থেকে বাহির হয়ে নিজের কমেন্ট করাটা নিজে ভেবে নিজেই হাসতে হাতসে পুরো বিছানা গড়া গড়ি খাচ্ছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে তার খেয়াল ই নেই।
অন্যদিকে তাহাসান এর মন খারাপ,
নামাজ পড়ে আসছে মন খারাপ হয়ে।
:-কিরে তাহাসান মন খারাপ কেনো.?(আম্মু)
:- জানো আম্মু আজকে না মসজিদ এ জিলাপি দেয়নি।
এমন উদ্ভট কথা শুনে আম্মু হাসতে হাসতে ফ্রিজ দিয়ে কতোগুলো জিলাপি বের করে দেয়।
:- না আম্মু আমি এই জিলাপি খাই না মসজিদ এ দিলে তা খাই যাও তো ভালোলাগছে না।
বলেই তাহাসান নিজের রুমে গিয়ে ফেবুতে লগইন করে।
একটা স্ট্যাটাস দেয়।
" ইস্ আজকেও মসজিদ এ জিলাপি দেয়নি
"
তারপর সব কিছু চেক করে প্রথমে কমেন্ট।
বাহ্ কমেন্ট এ একটা উদ্ভট কমেন্ট রচনা পড়ে তাহাসান এর মাথা ঘুরে যায় তবুও রিপ্লাই দিলো না তারপর মেসেজ। বাহ্ এটাই মেয়ে মানুষ, এক সকলের সামনে এক গাধা মান ইজ্জৎ সব ধুয়ে ফেলে পরে তা মজা হিসাবে নেই। তাহাসান ও এটা মজা হিসাবেই নিছে, কারন একমাত্র মজার জায়গা হিসাবে এই ফেবুটাকেই বেছে নিয়েছে তাহাসান। এমনি কোনো বন্ধুর সাথে আড্ডা নেই শুধু ভার্সিটি আর গল্প লেখা বিকেলে পার্কের এক কোণে বসে গিটার + গান বাজানো এটাই তার রুটিন।
সব কিছু চেক করা শেষ হলে আম্মু খাবর টেবিলে খাবার দিলে খাওয়া শেষ করে রুমের মধ্যে এসে ঘুম দিল একটা ইয়া বড়।
ঘুম ভাঙলো বিকেল ৫.০০ টা বাজে এখন তো আর কিছু করার নেই তাহাসান এর (মানে আমার)। নতুন এলাকা কোনো বন্ধু ও নেই, কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন আম্মু বললো পাশেই একটা পার্ক আছে, তা আর বসে না থেকে পার্কে চলে গেলাম। সাথে আমার প্রিয় সেই গিটার। ১৭তম জন্মদিন এ উপহার দিয়েছিল। আম্মু। বেশ যত্ন করেই রাখি।
পার্কে গিয়ে বেশ ভালোই লাগতেছে, ফুরফুরে বাতাস মন ছুয়ে গেছে।
ওই পার্কের কোনো একটা বেঞ্চ এ দিশা ও বসে ছিলো। কিন্তু দুজন দুজনকে তো চিনেই কার নাম কি সেটাও জানে না।
তাহাসান আর বেঞ্চ এ বসে না এক কোনে কিছু দূর্বাঘাস এর উপর বসে।
গিটার টা হাতে নিয়ে হালকা টুং টাং করতে থাকে, ভালো লাগছে না,
অপর দিকে দিশা তাকিয়ে আছে একটা ছেলের দিকে যে কিনা হাতে গিটার নিয়ে টুং টাং করতেছে সেটা দিশার চরম আকারের বিরক্তি লাগতেছে একবার ভাবছে ওই ছেলেটার কাছে গিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে।
" শালা গিটার বাজাতে পারোস না আবার মানুষ কে বিরক্ত করতেছিস।"
সেই ছেলেটা ছিল তাহাসান পিছন ফিরে থাকার কারনে চেহারা দেখতে পারেনি দিশা না হলে সকালের ঘটনার জন্য নিশ্চই কাছে গিয়ে কিছু একটা করতো।
সহ্যের সীমা হারিয়ে গেছে দিশা যেই বেঞ্চ থেকে উঠে ছেলেটার কাছে যাবে তখনি হালকা হালকা করে একটা গানের সুর তুলছি আমি। এটা গেয়েই চলে যাব বাসায় সন্ধা হয়ে আসতেছে।
তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার
যতো দূরে সরে যাও র’বে আমার
স্তব্ধ সময়টাকে ধরে রেখে
স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার
কেন আজ এতো একা আমি?
আলো হয়ে দূরে তুমি
.
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না
.
রোমন্থন করি ফেলে আসা দৃশ্যপট –
স্বপ্নে আঁকা
লুকিয়ে তুমি কোন সুদূরে
হয়তো ভবিষ্যতের আড়ালে
ঘাসের চাদরে শুয়ে একা
আকাশের পানে চেয়ে জেগে থাকা
তবে আজ এতো একা কেন?
আলো হয়ে দূরে তুমি
.
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না
.. হবে না .. হবে না
তাহাসান খান ভাইয়ের "আলো" গানটা অনেক ভালোলাগে তাই ওটাই গাই।
তারপর ওখান দিয়ে উঠে চলে আসি।
কেথা থেকে যেন দিশার বান্ধুবিরা এসে।
:- ওই দিশা ওই দেখ সকালের সেই ছেলেটা চল ওকে এখম মজা বুঝাই.... (রাত্রি)
:- নারে আজ না ওর গান শুনে ভালই লাগলো (দিশা)
:- কিরে দিশা মন কি অন্য দিকে ঘুড়ে গেলো নাকি.? (রাত্রি)
:- দোস্ত লাভ এট ফার্স্ট সাইড হি হি হি (মিথিলা)
:- আহা! আমাদের লেডি কিলার এখন প্রেমের জ্বলে হাবুডুবু খাচ্ছে এক চশমাপরা হাবলুর প্রেমে। (নিলা)
:- ওই তোরা চুপ করবি.? (দিশা)
:- দোস্ত ট্রিট দে এখনি! প্রেমে পড়ছোস।(মিথিলা)
:- ওই শালা আমি কখন প্রেমে পড়লাম.????(দিশা)
:- শালা না শালি হবে।(নিলা)
:- মিথিলা দোস্ত তোরে পুরুষ বানাই দিলো হা হা হা (রাত্রি)
:- ওই শালা শালি একি হইলো, আমরা আমরাই তো। আর ট্রিট চাবি ভালো কথা প্রেমে পড়ছি একবার ও বলছি হু..??(দিশা)
:- দিশা বুঝি বুঝি গভীর জ্বলে ডুব দিয়ে পানি খাওয়া, আমরা কি বুঝি না। এটা বলা লাগে না। (মিথিলা)
:- দূর তোদের বুঝাতে পারবো না। আমি চললাম, আবার যদি ওই ছেলেটা সামনে পড়ে তাহলে ওর একদিন কি আমার একদিন....
বলেই দিশা চলে গেলো পার্ক ছেড়ে আর ওর বান্ধুবিরা ওখানে বসেই আড্ডা দিতে লাগলো।
ওর বান্ধুবিদের কথা শুনে মাথা ঘুড়ে যাওয়ার পালা।
জীবনে কাউকে পছন্দ করলো না সে নাকি প্রেমে পড়ছে, রাগে ফুলতে ফুলতে দোকান দিয়ে ললিপপ কিনে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়, দিশা রাগ হলে সবসময় ললিপপ মুখে দিয়ে কানে ইয়ার ফোন দিয়ে বসে থাকে, আর আব্বু আম্মু ও ওকে বিরক্ত করে না। ইচ্ছে স্বাধীন।
:- ওই তাহাসান কেবল মাত্র বাহির দিয়ে আসলি, আর এখনি মোবাইল নিয়ে বসলি।
:- আম্মু যাও তো। একটা গল্প লিখতেছি। এখন ডিস্টার্ব করো না।
:- আচ্ছা দেখি কি গল্প লিখস..?
বলেই আমার হাত দিয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে পড়তে শুরু করলো, ইস্ গল্পে একটা রোমান্টিক প্রেম পত্র লিখিতেছিলাম।
প্রিয় *** আমি জানি তুমি আমাকে শুধু বন্ধু ভাবে এর বেশি কিছু না, কিন্তু এই বন্ধুক্তের মাঝে কখন যে আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি বুজতেই পারিনি, এখন.........
:- তাহাসান মেয়েটা কেরে.??? দেখতে কেমন.? তোরে কতবার বলছি বিয়েটা করে ফেল কিন্তু বিয়ে করার নাম ও নেই, আর এখানে দেখতেছি কাহিনী অন্য একটা।...
:- এই আম্মু এটা শুধু গল্প মাত্র, তুমি বুঝো না কেন হু.? যাও তো এখন মজা ভালো লাগবে না।
:- এখন এসব বাদ দে ১০ টার পর এগুলা করবি এখন ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করে নে।
:- না এখন আর খাওয়া করবো না।
:- তাহলে আমিও এখান দিয়ে যাব না।
:- আমার লক্ষি আম্মু টা যাও না।
:- আমার তো একটাই কথা সেটা ভালো করেই জানো বাবা তাহাসান আমি যেটা বলি সেটা করে ছাড়ি। এখন লক্ষি ছেলের মত ল্যাপটপ রেখে এ রুম দিয়ে বাহির হও।
কি আর করার আম্মুর জেদের কাছে আমি কিছুই না, তারপর হালকা ফ্রেশ হয়ে আম্মুর সাথে বসে ভদ্র ছেলের মতো টিভি দেখলাম, ১০ টা পর্যন্ত তারপর ফেবু গল্প লেখা তে রাত ৩.০০ বেজে গেছে তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি।
সকাল সকাল ই দিশা মেকাপ নিয়ে বসলো কারন আজ তো ভার্সিটি যাবে তাই একটু না সাজলেই নয়। সাজা শেষ করে।
:- আম্মু আমি আমি ভার্সিটি যাচ্ছি। (দিশা)
:- আচ্ছা মামনি ভালো ভাবে যাও, তোমার রিফাত আঙ্কেল ভার্সিটির গেটে তোমার সাথে দেখা করবে, আর ভার্সিটির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
:- আচ্ছা আম্মু বাই।
বলেই দিশা চলে যাচ্ছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রাস্তায় তার বান্ধুবিদের ও নিয়ে নেয়।
ওহ রিফাত আঙ্কেল হচ্ছে ভার্সিটি এলাকার একজন নামি দামি রাজনৈতিক ব্যাক্তি তার কথায় ই ওই এলাকার সব কিছু হয়, তাকে ভয় ও পায় সবাই, আর ভার্সিটির বড় ভাইরা সবাই তার হয়েই কাজ করে।
বলতে বলতে ভার্সিটি চলে আসে দিশা।
:- আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল ভালো আছেন.?(দিশা)
:- আলহামদুলিল্লাহ মামনি ভালো তুমি কেমন আছো, (রিফাত আঙ্কেল)
:- এইতো আঙ্কেল আপনাদের দোয়ায় ভালই আছি।
:- তোমার বাবা মা কেমন আছে.??
:- সবাই ভালো আঙ্কেল,
:- আচ্ছা চলো সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে রিফাত আঙ্কেল চলে যায়, এখন দিশা আরো পাওয়ার পেয়ে যায় ছেলেরা দিশা কে দেখলেই মাথা নিচু করে রাখে, আর দিশা ও একটা আলাদা ভাব নিয়ে প্রথম দিন ই র্যেগিং শুরু করে দেয়।
১০ টা বেজে গেছে তবুও তাহাসান এর ঘুম দিয়ে ওঠার নাম ও নেই।
:- ওই তাহাসান ওঠ তারাতারি সকাল ১০ টা বাজে ভার্সিটি যাবি না.???
:- না আম্মু আজ যাওয়া হবে না একটু ঘুমাইতে দেওনা প্লিজ।
:- ওই তুই নাকি সকাল ৬.০০ টা বাজে ঘুম দিয়ে ওঠো প্রতিদিন.?
:- এই আম্মু ওটা তো একটু মজা করছিলাম।
:- আচ্ছা মানলাম মজা করছিস। তবে আমার দেওয়া সেই কথা মনে আছে.?
:- কোন কথা আম্মু.?
:- একদিন ভার্সিটি মিস গেলে তোর বিয়ে দিয়ে দিব!!!!
এই কথাটা বলতে দেরি তাহাসানের ঘুম পালিয়ে গেছে ৫ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে ভার্সিটি রওনা হয়ে গেলে, আর এদিকে তাহাসান এর আম্মু তো অবাক। একটা যুবক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ বিয়ে করাতে এমন ভয় পায়।
সেটা ভেবেই যায়।
তাহাসান এদিকে ক্লাসের দেরি হয়ে গেছে দেখে তারতারি ভার্সিটি পৌছে
গেট দিয়ে ঢুকবে তার একটু আগে।
:- ওই দিশা তুই গেটের কাছে যা যেই ছেলেটা গেট দিয়ে ঢুকবে সেটার ১২ টা বাজাবো। (মিথিলা)
:- কিহ্ আজ আমার প্রথম দিন তোরা কেউ যা।(দিশা)
:- না আজ প্রথম দেখেই তোকে যেতে হবে। আমরা পুরানো সবাই চিনে আমাদের। (রাত্রি)
:- ওকে যাচ্ছি।
বলেই দিশা গেটের কাছে গেছে আর বাহির দিয়ে তাহাসান ভিতরে দ্রুত আসতে গিয়ে দিশার সাথে মুখো মুখি সংঘর্ষ, তাহাসান ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়,
কি হয়েছে ঘটনা টা দেখতে পিছন ফিরে দেখে, তাহাসান কোনো এক অচেনা মেয়ে এংড়ি বার্ড হয়ে আছে।
:- ওই ছেলে তুই.? তুই আমার পিছু পিছু এখান পর্যন্ত চলে আসলি.? সেদিন সকালে চায়ের দোকানে ধাক্কা দিলি, তারপর পার্কে তোর জন্য বান্ধুবিদের কথা শুনছি আজ আবার ভার্সিটিতে. আমাকে ধাক্কা দিলি তোর সাহস তো কম না।
:- সরি আপু আসলে আমি এসবের কিছুই জানিনা। আর আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা খাইনি ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে আপু। আমি চলি। আর আমার যদি কোথায়ও ভুল হয়ে থাকে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। বলেই হাটা দেই।
:- ওই শালা কই জাস.?
আমার শার্টের কর্লার ধরে কথাটা বললো রাত্রি।
:- রাত্রি এটা কিন্তু ঠিক না, তোমাকে আগেও বলছি এমন ফাজলামি করবে না। (আমি)
:- আমি করবো তাতে তোমার কি.??
:- দেখো আমি তোমাকে পছন্দ করিনা। আগেও বলছি এখনো বলি।
:- তাতে কি হয়েছে আমি তো পছন্দ করি।
:- তুমি যদি একা পছন্দ করতে তাহলে হতো। তোমার আরো দুইটা বান্ধুবী বললো পছন্দ করে। আমি তো বাজারের পণ্য না যে পছন্দ হলেই নিতে হবে।
:- এখানে এসব বলতেছো কেনো.?? আমার মনের কথা জানিয়েছি মাত্র।
:- রাত ৩ টার সময় ফোন দেওয়া মনের কথা জানানো তাই না। ফেবুতে হাজারো মেসেজ দিয়ে ভরে রাখা এটা মনের কথা জানানো।
দেখো আমি জানি তুমি একটা ভালো মেয়ে।
তুমি আমাকে প্রপোজ করার আগে আমার বন্ধু তোমাকে পছন্দ করে। সেটা আমি আর তুমিও ভালো করে যানো।
দিশা তাহাসান এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আরো বেশি অবাক হচ্ছে রাত্রির সাথে এমন কথা শুনে। দিশা জানতোনা যে আমি এই ভার্সিটির ই ছাত্র। গত ৩ বছর ধরে আছি। হোস্টেলে ছিলাম কিন্তু আম্মু একা একা না থাকতে পেরে ওই এলাকায় আম্মুর সাথে নতুন উঠেছে তাহাসান।
রাত্রির সাথে কথা শেষে করেই আমি ওখান দিয়ে চলে যাই।
:- ওই রাত্রি তুই ওই ছেলেটাকে চিনোস..??(দিশা)
:- হু চিনি, শুধু আমি না মিথিলা, নীলা, ওরাও চিনে ওকে। শুধু তুই চিনিস না ওকে। নতুন আসছিস তো তাই।ওর নাম তাহাসান আমাদের সাথেই পড়ে ওকে যেদিন তোর সাথে ধাক্কা খেতে দেখি চায়ের দোকানে সেদিন তো রিতিমত অবাক। কারন তাহাসান হোস্টেলে থাকে। তারপর তুই বাসায় যাওয়ার পরে ওর সব খোঁজ নিয়ে ফেলি। আমাদের এলাকাতে ওর মায়ের সাথে উঠছে নতুন। (রাত্রি)
:- এতকিছু আর আমাকে একটুও জানাস নি.? শালা তোরা বেইমান। আমাকে বললে কি তোর আশিক কে তুলে নিয়ে যেতাম নাকি।
:- হা হা হা, আমার আশিক মানে। আরে ওর সাথে শুধু সময় পাস।
:- এই না হলে আমার বান্ধুবি, কিন্তু ওর কথা শুনে মনে হলো ছেলে লাইনে আসবে না।
:- হু রে। মেয়েদের সাথে একদম মিশে না। চুপচাপ সবসময়। শুধু বই ক্লাস।
আর কিছু না।
:- তাহলে ফেবু.?
:- ও তুই বুঝবি না। ফেবুতেই ওর দিওয়ানা হয়ে গেছি।
:- মানে কি.???
:- বাদ দে ওর কথা চল। আর একটা কথা আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিছুদিন পর ছেলে বাহির দিয়ে আসলেই বিয়ে।
:- তোরে কিছু বলমু না। তুই দোস্ত নামের কলঙ্ক। সব লুকিয়ে রাখিস। আর মনে রাখিস ওই তাহাসান নাকি যেনো ওর ১২ টা বাজাবো আমি দিশা। যদি ওর ১২ টা না বাজিয়েছি তাহলে আমার নাম ও দিশা না।
:- আচ্ছা দেখা যাবে। এখন ক্লাসে যাবি.??
:- আমি কি এখানে আসছি ক্লাস করতে নাকি..?? চল কিছু ছেলেদের র্যাগ দিবো তারপর বাসায় যাব।
:- চল তাহলে ওই যে লাল টি শার্ট পড়া ছেলেটা দিয়েই শুরু কর (মিথিলা)
দিশা চলে গেলো ওই ছেলেটার কাছে।
:- এই ছেলে তোমার নাম কি.? (দিশা)
:- রুহান।
:- গুড তা, কোন বর্ষে.?
:- ২য় বর্ষে।
:- ঠাসসসসসসস বড়দের দেখলে সম্মান দিতে হয় জানিস না। সালাম দে।
রুহান এর হাটু কাপা শুরু করে একটু আগেই ওর পরিচয় ক্যাম্পাস এর সবাই যেনে গেছে এখন কেউ ওর সাথে বেয়াদবি ও করতে পারবে না।
কাপা কাপা কণ্ঠে
:- আসসালামু আলাইকুম।
:- অলাইকুম। এখন এই ফুলটা নেই। ওইযে একজোড়া ছেলেমেয়ে বসে আছে সেখানে গিয়ে মেয়েটাকে এটা দিয়ে বলবি। জানু আমাকে এখন ভুলে গেলে মালদার পার্টি পাইছো.?? বাহ্!!
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুহানের কাজটা করতে হবে, একদিকে সিনিয়র অন্য দিকে তার পাওয়ার।
কোনো ভাবে রুহান ওই মেয়েটার কাছে গিয়ে ফুল দিয়ে আর কথা বলতে পারে না।
ঠাসসসস মেয়েটা একটা চড় দেয় রুহান কে। তারপর আর কি রুহান ওখানে ফুল রেখে এক দৌর।
রুহান কে আর ৭ দিনেও ভার্সিটির আশে পাশে দেখা যাবে না।
এদিকে দিশা আর ওর বান্ধুবিরা তো হাসতে হাসতে শেষ। প্রথমদিনে ই ভার্সিটির ক্যাম্পাস মাতিয়ে তুলছে। মেয়েদের সাথে ভালোই মিশে গেছে। রাত্রি, মিথিলা, নীলার বান্ধুবিরাও একত্র হয়ে একটা গ্যাং তৈরি করে ফেলে একদিনেই।
এদিকে তাহাসান মন দিয়ে ক্লাস করছে। চোখে চশমা পড়ে। মাঝে মাঝে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দিশার কাজ কর্ম দেখছে। মনে মনে ভাবে। এ আবার কেমন মেয়ে একটুও ভয় নেই। যাহ্ এর থেকে দূরে থাকতে হবে।
ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে যাবে, তাহাসান, আর ভালোলাগছে না, দুদিন পরে ভার্সিটির অনুষ্ঠান, তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে ক্লাস আর হবে না।
তাই বাসায় চলে যাবে তাহাসান। গেটের সামনে আসতেই দেখে,। দিশা আর ওর বান্ধুবিরা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু দিয়ে গাট দিয়ে বাহির হতেই দিশা তাহাসান কে পা মেরে দেয় আর তাহাসান একটা ছেলের উপর পড়ে সিনিয়র।
-- কানা নাকি দেখে চলতে পারিস না।
বলেই সিনিয়র ভাই চলে যায় আর তাহাসান নিরিবিলি চুপ করে মাথা নিচু করে রিক্সায় উঠে চলে যায়।
দিশা তো হতাস এমন ও হতে পারে...
একটা ছেলেকে এমন করে ডিস্টার্ব করলে তো একবার হলেও পিছন ফিরে তাকাবে। কিন্তু ও তো তাকালো না। কিশের এত ভাব ওর.?
নাকি আমি দেখতে সুন্দর না.?
এখন দিশা শুরু করে দিল পাগলামি। নিশ্চই আমি সুন্দরনা তা না হলে ওই ছেলেটা আমার দিকে তাকালো না কেনো.??
:- ওই রাত্রি এদিকে আয়। ওই কি সুন্দর না???
মিথিলা আমি কি দেখতে খারাপ.? মুখে কেমন যেন একটা রাগ নিয়ে। কথা গুলো সবাইকে ডেকে ডেকে বলতেছে।
সবার একটাই উত্তর তোর মত সুন্দর মেয়ে ভার্সিটিতে আর একটাও নেই।
:- তাহলে তাহাসান আমার দিকে তাকালো না কেনো.?
এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারলো না।
মন খারাপ করে আজ বাসায় গেলো।
:- এই আম্মু আমি দেখতে খারাপ.?
:- নাতো কে বললো তুই খারাপ। তুই তো অনেক সুন্দরী। আমার লক্ষি মেয়ে।
:- তাহলে ওই ছেলেটা আমার দিকে তাকালো না কেনো.?
:- কোন ছেলেটা মামনি.??
:- ওই যে আছে একজন আমাদের ভার্সিটিতেই পরে। আর শুনেছি এই এলাকায় ই থাকে।
:- ছেলেটা হয়তো এমনি তাকায়নি তোর দিকে। বা তার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে তাই হয়তো তাকায়নি। একজন কে না কে তোর দিকে তাকায়নি বলে এত রাগ করে আছিস.??
:- সেটা বড় কথা না কথা হলো ওকে বিরক্ত করছি তাও কিছু বললো না আজিব ছেলে।
বলেই নিজের রুমে চলে গেলো দিশা। মন খারাপ দিশার, কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। তাই ফেবুতে ঢুকে গল্প পরছে।
তাহাসান বাসায় ঢুকেই প্রায় দুইগ্লাস পানি খেয়ে ফেললো, যাক বাচা গেলো।
বদমেজাজি মেয়েদের থেকে দূরে থাকাই ভালো চিন্তা করছে তাহাসান।
খুব ভয় পেয়ে গেছে।
জীবনে প্রথম মেয়েদের দেখে দৌড়ে পালিয়ে আসে। এমনিতে এমনটা করে না ও। প্রতিদিনেরর মত আজকের দিনটাও চলে গেলো। ফেবু আম্মুর সাথে আড্ডা, আর ঘুম। পড়ালেখার কথা বাদ দিলাম।।
রাত শেষ হয়ে সকাল ৮ টা বাজে।
:- এই দিশা কোথায় যাচ্ছিস.??(দিশার আম্মু)
:- ভার্সিটি যাব।
:- এত তারাতারি.?? কেনো।
:- তোমার জানতে হবে না খাবার দেও তারাতারি।
রাগে বেলুন হয়ে আছে দিশা। আর দিশার আম্মু দেখেই তা বুজতে পেরেছে। বেশি কথা না বলে দিশাকে নাস্তা খাইয়ে ভার্সিটির জন্য পাঠিয়ে।
মনে মনে বলে দিশার আম্মু "বেচারা কোন ছেলের আজ ১২ টা বাজে আল্লায় জানে"
বলেই দিশার আম্মু নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
দিশা রাগে আগুন হয়ে আজ গাড়িতেও যাচ্ছে না পায়ে হেটে যাচ্ছে ভার্সিটি।
কি করবে একা একা ভার্সিটি যাচ্ছে এত সকালে ঘুম থেকে ও ওঠে না দিশা। তাই রাত্রি কে ফোন দিল।
-- হ্যালো বল এত সকালে.?? (রাত্রি ঘুমঘুম কণ্ঠে)
-- ভার্সিটি যাব বাসা দিয়ে বাহি হ.
-- এত সকালে ভার্সিটি যাবি.?
-- হ্যা এত সকালেই যাব কোনো প্রশ্ন.?
-- না মানে আমি তো এখনো ঘুমে।
-- ওয়েট
বলেই ফোনটা কেটে দেয় দিশা। আস্তে করে রাত্রিদের ফ্লাটে উঠে রাত্রির রুমে চলে যায়।
রাত্রির আব্বু আম্মু দিশাকে চিনে। ওরা ভালো বন্ধু তা তাদের এলাকার সবাই যানে।
দিশার মাথায় এমনি ই রাগে ভরপুর তার উপর রাত্রির রুমে ঢুকে দেখে রাত্রির দু পাশে দুটো টেডিবিয়ার নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সেটা দেখে আরো রাগ বেরে গেলো দিশার।
বাতরুম থেকে এক বালতি পানি নিয়ে এসে রাত্রিকে ভিজিয়ে দিল।
লাফিয়ে উঠে রাত্রি দেখে ওর সামনে অগ্নিমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিশা।
-- কি করলি এটা.??? (রাত্রি)
-- ভালো করছি আমি ফোন দেওয়ার পর ও তুই ঘুমাই ছিলি ক্যান.??
-- না মানে সবে তো ৮.২০ বাজে আমার ঘুম তো ৯.০০ টা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না।
-- তোর ঘুম রাখ জলদি তৈরি হ ৫মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে বাকিদের ফোন দিচ্ছি।
-- এগুলো কে গুছাবে.?
-- আমি আন্টিকে বলে দিব রহিমাকে দিয়ে এগুলো গুছিয়ে নিবে।
ওহ রহিমা হচ্ছে রাত্রির বাসার কাজের মেয়ে।
আর কিছু কথা বারালো না রাত্রি চলে গেলো ফ্রেশ হতে আর দিশা বাকিদের ফোন দিয়ে ডিরেক্ট হুমকি,
অন্যদিকে তাহাসান এখনো ঘুমে, রাত তিনটা পর্যন্ত ফেবুতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ছোট্ট একখানা গল্প ও লিখে ঘুমানোর আগে। মোট কথা ফজরের নামাজ পরে ঘুম দিয়েছে তাহাসান, এত সহজে ঘুম ভাঙবে না ওর।
তবে ৯.০০ টার পরে বিছানায় থাকতেও পারে না তাহাসান ওর আম্মুর অত্যাচারে।
কোলবালিশ টা পায়ের কাছে পুরো শরীরে ইয়ারফোন এর তার গুলো জড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে বিছানার উপর একটা জঙ্গল এর কাছ শুয়ে আছে।
৯.২০ বাজে দু বার এলার্ম বাজলেও তাহাসান উঠলো না। বেচারা তাহাসান
তার আম্মু এসে তাতে খাট দিয়ে টেনে নিচে ফেলে দেয় তবুও ঘুম ভাঙলো না তাহাসানের। তারপর ২য় পদক্ষেপ গ্রহন করলো আম্মু।
এক বালতি পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিল। এখন আর ঘুমের মধ্যে থাকতে পারলাম না। চোখ খুলতেই আম্মুর বকা খেতে হলো আজো।
দৈনিক বকা খেতে খেতে অভ্যস্ত। তা এখন আর কিছু মনে হয়না।
৯.৩০ হালকা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাহাসান।
-- ওই দিশা কি হইছে বলবি তো সেই ৮.৩০ এ ভার্সিটি এসে বসে আছি কিছু বলবি তো.?? (মিথিলা)
-- চুপ হারামি একদম চুপ কিছু জিগ্যেস করবি না। সময় হলে সব বুজতে পারবি (দিশা)
-- দেখ দিশা কি হয়েছে বলবি তো। আর আমরা তো চুপ ই আছি। তুই তো রাগে নিজের নক চিবুচ্ছিস। (রাত্রি)
-- আমি কি দেখতে খারাপ.?????(দিশা)
দিশার এমন কথা শুনে ওর বান্ধুবীর সবার চোখ বড় বড় করে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে।
-- মানে কি এটার জন্য তুই আমাদের এত সকলে ভার্সিটি নিয়ে আসছিস.?? তুই তো আমাদের সব বান্ধুবীদের থেকে সুন্দর। (মিথিলা)
-- তাহলে কাল তাহাসান না জানি ফাহাসান ওকে পা মেরে ফেলে দিয়েছি তারপর ও আমার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা আমার দিকে তাকালো না।.???
-- তুই একটা গাধি। ও ওইরকম ই (রাত্রি)
-- তোর আর গুন গাইতে হবে না ওর হয়ে, আজ ওর ১২ টা বাজাবো। (দিশা)
-- আচ্ছা আমরাও আছি ওর এত ভাব কোথা দিয়ে আসে সেটাও দেখবো আমরা ( বাকি বান্ধুবীরা একসাথে)
-- ওয়েট কর ওর আসার সময় হয়ে গেছে (রাত্রি)
-- সেটা কীভাবে বুজলি.??(দিশা)
-- ও কখন কি করে ভার্সিটি বসে সব জানা আছে আমার। শত হলেও কিছুদিন ওর পিছনে ঘুরছিলাম। (রাত্রি)
-- হারামি......
বলেই সবাই চুপ। ধিরে ধিরে ভার্সিটি মানুষে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে। একে একে সবাই চলে আসতে লাগলো কিন্তু তাহাসান আসলো না।
আরো ২০ মিনিট পর তাহাসানের দেখা মিললো তাদের দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। তাহাসানকে দেখা মাত্রই দিশার চেহারায় রাগে লাল হয়ে গেলো।
গেট দিয়ে ঢুকতেই তাহাসান অবন্তীকার সাথে ধাক্কা খায় আর অবন্তীকা পরে যেতে দেখে রোমান্টিক স্টাইলে কোমরের নিচ দিয়ে অবন্তীকাকে ধরে ফেলে। দুজনার চোখাচোখি এক হয়ে আছে.....
গেট দিয়ে ঢুকতেই তাহাসান অবন্তীকার সাথে ধাক্কা খায় আর অবন্তীকা পরে যেতে দেখে রোমান্টিক স্টাইলে কোমরের নিচ দিয়ে অবন্তীকাকে ধরে ফেলে। দুজনার চোখাচোখি এক হয়ে আছে।
মুহূর্তেই তাহাসান নিজেকে সামলে নেয়। আর অবন্তীকে টেনে দাড় করিয়ে দেয়।
অন্য দিকে দিশা তো রাগে ফুলতেছে।
-- ওই দেখ দেখ তোদের ভদ্রছেলের কাণ্ড। কত মানুষের সামনে ওই মেয়েটার কোমড় ধরে আছে। (দিশা)
-- আরে অবন্তীকে না ধরলে তো অবন্তী পরে গিয়ে ব্যথা পেতে পারতো তাই হয়তো ধরছে। (মিথিলা)
-- ইশ্ আমাকে যদি ধরতো না আমি তো কখনোই সরতাম না ওখান দিয়ে। (রাত্রি)
-- ওই হারামির দল তোরা এখনো ওর গুন গাইতেছিস.???(দিশা)
-- কি করবো বল।(রাত্রি)
-- ওহ তোদের তো মন্ত্রপূত করে রাখছে ওই সালায়, দাড়া আজ এখানে আসুক ওর মজা দেখাচ্ছি। দেখ দেখ কি সুন্দর করে কথা বলতেছে.
লুচ্চা কোথাকার। তোরা তো বলছিলি কোনো মেয়ের সাথে কথাই বলে না। এখন দেখি লুচুর হেডমাস্টার।
দূরে দাঁড়িয়ে আছে দিশা তাই ওদের কথা শুনতে পাচ্ছে না। দিশা যেটা ভাবছে ঠিক তার উল্টো কথা হচ্ছিলো ওদের মাঝে।
ওদিকে তাহাসান অবন্তীর কাছে
-- সরি সরি আপু আমি আপনাকে না ধরলে আপনি পরে গিয়ে ব্যথা পেতেন, তাই ধরতে হয়েছে। আপনার শরীরে আমার হাতের স্পর্শ লাগছে সরি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
-- ওই তাহাসান এতে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে.?? আমার তো ভালোই লেগেছে (লজ্জা মাখা মুখে কথাটা বললো অবন্তী)
-- আচ্ছা বুজলাম না আপনার কথা, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেই হবে।
-- এই আপনি আপনি করতেছো কেনো.?? আমরা তো ক্লাসমেট। তাহলে তো সমবয়সী আর সমবয়সী কে আপনি আপনি বলতে নেই। তুমি করে বলবে.
-- সরি আসলে আমি আপনাকে তুমি করে বলতে পারবো না। তুমি করে বলা তো দূরের কথা আপনার সাথে যে এই টুকু কথা বলছি দেখেন আমার হাটু কাঁপছে। বাই দা ওয়ে আপনি আপনার কাজে যান আমি ক্লাসে
বলেই তাহাসান ক্লাসের দিকে হাটা দিচ্ছে তখনি অবন্তী তাহাসানের হাত ধরে ফেলে। কিন্তু তাহাসান অবন্তীর হাত ছাড়িয়ে ক্লাসের দিকে হাটা দেয়।
কিন্তু তাহাসানের সামনে যে তার বিপদ দাঁড়িয়ে আছে সেটা তো আর জানে না।
নিজ মনে মাথা নিচু দিয়ে হাটছে তাহাসান উদ্দেশ্য ক্লাসরুম। মাঝ পথেই পথ আটকালো দিশা।
-- ওই ছ্যাঁচড়া পোলা দারা। (দিশা)
-- জ্বী আমাকে বলছেন.?? (তাহাসান)
-- জ্বী আপনাকেই বলছি। তোর এত ভাব কিশের রে.??
-- আমার ভাব.? আমি আবার কী করলাম.? আমার কোনো কাজে কি বিরক্ত হয়েছেন কি.??
-- ওই সালা আমি কি দেখতে খারাপ.??
-- আপনার দিকে তো তাকাই ই নি কীভাবে বুজবো আপনি দেখতে খারাপ নাকি ভালো.? আর একটা কথা চেহারা সুন্দর হলেই সুন্দরী হওয়া যায় না মন সুন্দর হতে হয়।
-- তুই কি বলতে চাইছিস আমার মন সুন্দর না.?? তুই কী দেখছিস বে..??
আমার বিষয়ে কিছু জানিস.?? তোকে এখনি এই ভার্সিটি দিয়ে বিদায় করে দিতে পারি।
-- আপনি বিলগেস এর কন্যা ই হন না কেনো তা দেখার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি সাধারন একজন মানুষ, আমার ওগুলো বুঝে লাভ নেই।
আর হ্যা ভার্সিটি থেকে বিদায় হওয়ার চেষ্টা করছি বহু দিন হয়েছে। এখন যদি আপনি করে দেন তাহলে তো ভালোই হতো।ধন্যবাদ পেতেন একটা।
-- ইশ্ তুই না একটা ফাজিল মেয়েদের মত ঝগড়া করতে ভালই পারিস।
-- আমি ঝগড়া করি না শুধু কথার উত্তর টা দেই।
ঠাসসসস ঠাসসসস দুটো চড় মারলো দিশা তাহাসানকে আর বলতে লাগলো।
-- মুখে মুখে কথা বলা বন্ধ কর আজ থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।
কিন্তু তখনি অবন্তী এসে দিশার আর তাহাসানের মাঝে চলে এসে।
-- কিরে তুই তাহাসান কে মারলি কেনো.?? (অবন্তী)
-- মারছি তাতে তোর কী.??(দিশা)
-- আমার অনেককিছু কিন্তু তুই ওর গায়ে হাত দিলি কেনো.??
-- আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই মেরেছি। আমি চাইলে আরো মারবো।
-- তুই পারবি না, দাড়া আজি আব্বুর কাছে বলে তোকে ভার্সিটি দিয়ে বিদায় করছি।
-- যা যা তুই যা পারিস কর।
তখনি অবন্তী তাহাসানের হাত ধরে ক্লাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তাহাসান তো হতবাগ হয়ে আছে কি করবে বুজতে পারছে না। তাহাসান এর হাত ধরে ক্লাসের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় অবন্তীর পিছে দুই বছর ধরে ঘুরতেছে, ফাইনাল ইয়ারের একটা ছেলে ভার্সিটির মোটামুটি নেতাও বটে।
এসেই তাহাসানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো তিন চারজন ছেলে এসেই উড়ো ধুরো মাইর দিতে লাগলো তাহাসান কে আর সেই বড় ভাই বলতে লাগলো।
-- সালা দু বছর ধরে লাইন মারছি ওর সাথে বলতে পারিনি আর আজ তুই ওর হাত ধরে হাটতেছিস.??
কিছুক্ষণ মাইর দিয়ে চলে যায় বড় ভাইরা। আর তাহাসান হাসপাতাল এর বেডে।
মাথা ফেটে যায় আর সারা শরীরে ব্যথা পায় তাহাসান। হাসপাতাল এর বেডে শুয়ে আছে তাহাসান মাথায় ব্যান্ডেজ করা, অর্ধ শোয়া অবস্তায় বসে আছে আজ একদিন। শুনলো ওই বড় ভাইদের ভার্সিটি থেকে বাহির করে দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল টা নিয়ে ফেবু গুতাচ্ছিল ঠিক তখনি তাহাসানের ক্যাবিনে অবন্তী চলে আসলো ওকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে।
-- আপনি.???? (তাহসান)
-- কেনো.? আমার কি আসা বারন নাকি.??
-- আপনি এখানে আসলেন, হঠাৎ.?
-- আসলে সরি বলতে আসছিলাম।
-- সরি কেনো.??
-- আজ আমার জন্য আপনার এমন অবস্থা হয়েছে তাই সরি।
-- It's ok,
-- ধন্যবাদ। এখন কেমন আছেন.??
-- জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।
-- এখানে কি সমেস্যা হচ্ছে.??
-- না তো।
-- আচ্ছা আপনি কি এমনি.??
-- জ্বী বুজলাম না। আমি আবার কেমন.??
-- এইযে কথা কম বলেন.?
-- হুম। শুধু মেয়েদের জন্য।
-- মানে.??
-- যেটা শুনছেন সেটাই। মেয়েদের সাথে কথা কম বলি।
-- কেনো মেয়েরা কি কিছু করছে আপনার.??
-- না কিছু করেনি, কিন্তু ভয় করে।
-- ভয়.? আরে আজিব তো ভয় করবে কেনো.? মেয়েরা কি আপনাকে মারবে নাকি কিডন্যাপ করবে.??
--.............(নিঃশব্দ কোনো কথা নেই কারন এর উত্তর তাহসান এর কাছে নেই)
-- কী হলো কথা বলছেন না কেনো.?
-- এর উত্তর আমার কাছে নেই.?
-- আচ্ছা উত্তর নেই যখন, ফোন নাম্বার দিন।
-- আমার ফোন নেই।
-- বারে এইমাত্র দেখলাম মোবাইল টিপতে এখন বলে মোবাইল নেই। আপনি তো ভারি মিথ্যুক। এই যা আমি তোমাকে আপনি আপনি করে বলছি কেনো.? আমরা তো সেই বয়সী তাই নো আপনি। অনলি তুমি।
-- সরি আমি তুমি করে ডাকতে পারবো না। আর মোবাইল নাম্বার দেওয়া যাবে না।
তখনি অবন্তীর চোখ দুটো বড়বড় করে রাগি চোখে তাহাসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
-- কী বললে দেওয়া যাবেনা.?
-- না দেওয়া যাবে না।
ঠিক তখনি অবন্তী টেবিলের উপরে রাখা ফল কাটা ছুড়িটা হাতে নিয়েই তাহসান এর গলা বরাবর ধরে।
-- এই এই কি করতেছেন.? আমার গলায় লাগবে তো.?
-- এখন বলতো নাম্বার দিতে পারবি না.?
-- না মানে।
-- আবার না মনে দাঁড়া
বলেই অবন্তী ছুড়িটা তাহাসানের গলায় একটু ছুয়ে দেয়।
--0187950****
-- হু আবার বল।শুনতে পাইনি।
--0 1 8 7 9 5 0 * * * *
-- হু ঠিক আছে। নিজের খেয়াল রাখবে, আর এই এখন এই ফলটা খাও।
বলেই অবন্তী একটা আপেল কেটে দিলো। আর তাহসান এর কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। তাহসান এক গ্লাস পানি খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো.! শুকিয়ে গেছিলো গলাটা।
বাবা কেমন মেয়েরে একটুও ভয় নেই। ছুড়ি টা যদি আমার গলায় ঢুকিয়ে দিত।
কথা গুলো নিজের মনে মনে বলতেছে আর একটু মনখুলে নিশ্বাস নিচ্ছে।
এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে তাহাসান।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে তাহাসান আবার ও মোবাইল টেপায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করলো।
-- কিরে দিশা এখানে মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো.?? (মিথিলা)
-- নারে এমনি ভালোলাগছে না। (দিশা)
-- তুই কি কিছু নিয়ে উদাস.? (নীলা)
-- নারে ভালোলাগছে না।
-- জানি জানি তোর মন খারাপ। দুদিন ধরে ভার্সিটি ও যাসনি.! কোনো ছেলেকে নিয়ে মজা করাও হয়নি। (মিথিলা)
-- বাদদেনা এসব। এমনিতেই কেমন জেনো লাগতেছে.?
-- আচ্ছা কী হয়েছে বলবি তো.?
-- এই শোন ওই যে তাহাসান না জানি কি নাম ওর। ওকে সেদিন থাপ্পড় দেওয়া টা ঠিক হয়নি। পুরো ভার্সিটির মধ্যে। তারপর তো দেখলাম ই। এই এই দুদিন কি ও আসছিলো ভার্সিটি.?
-- নারে বেচারা হাসপাতালে শুয়ে আছে। শুনছি ঠিক হতে আরো দুদিন লাগবে।
-- এই কোন হাসপাতালে আছে রে.?
-- সরোয়ার্দি হাসপাতালে ভর্তি আছে। ৩০১ নং কেবিনে। (রাত্রি)
-- জানতাম তুই সব জানিস।
-- হু একটু হলেও খোঁজ নিতে হয়।
-- কীভাবে পাস এসব খবর.??
-- সিক্রেট।
-- তোর সিক্রেটের ***
-- ছিঃ ছিঃ বাজে কথা বলে না দিশা। এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
-- আচ্ছা ভালো, তোরা থাক আমি আসতেছি।
-- কোথায় যাবি.?
-- বলা যাবেনা সিক্রেট।
-- আমার কথা আমাকে ফিরত দিলি.??(রাত্রি)
একটা সামান্য মুচকি হাসি দিয়ে ওদের থেকে চলে আসলো।
রাস্তার পাশেই একটা রিক্সা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
-- এই মামা সরোয়ার্দি হাসপাতালে চলেন।
-- ওঠেন ম্যাডাম।
দিশা রিক্সায় চেপে বসেই, সরোয়ার্দি হাসপাতালে তার ডাক্তার আঙ্কেলকে
ফোন দিয়ে বলে যে ৩০ মিনিটের জন্য একটা নার্সের ড্রেস লাগবে। আর সেটা দিয়ে কি করবো তা বলা যাবে না।
সেই আঙ্কেল এর আর কিছু করার নেই দিশা যা বললো তাই করতে হবে কি করার খুব আদর করে দিশাকে। তা রাজি হয়ে গেলো। প্রায় ৩০ মিনিট পর তাহাসানের ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
হুট করেই একটা নার্স তাহাসানের কেবিনে ঢুকে পরে। হাতে ওষুধ নিয়ে।
-- এই এই কি করছেন.? আপনাকে না বলছি হুট করে আমার কেবিনে চলে আসবেন না.? আর ছেলে স্টাফ নেই হাসপাতালে.? (তাহসান)
-- আমি তো আজ নতুন আসলাম তাই আর কি বুজতে পারিনি। এই যে এই হা করেন।
-- হা করবো কেনো.?
-- আরে মুখ না খুললে ওষুধ খাবেন কীভাবে.?
-- এদিকে দিন ওষুধ টা আর আপনি এখান দিয়ে চলে যান।
-- ওই কী বললেন যাব মানে। হা কর নাহলে এই যে ছোড়া টা দেখছেন পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিব। হা করতে বলছি হা করবেন।
একি তাহাসান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে নার্সটার দিকে সত্যি বড় অদ্ভুত তো নার্সটা।মুখের উপর একটা মাস্ক ও পরেছে। আজ প্রথম দিনেই এমন ব্যবহার।
এটা নার্স নাকি ডাকাত।
........
-- আমাকে কিছু বললেন.? (নার্স)
-- নাতো আপনাকে কিছু বলতে পারি।
-- না কী জেনো মনে মনে বললেন ডাকাত না জেনো কি.?
এরে ধরা পরে গেলাম নাকি.? নার্স টা জানলো কীভাবে আমি তাকে ডাকাত বলছি। কারো মনের ভিতরে ঢুকে কথা শুনার অভ্যাস আছে হয়তো নার্স এর।
-- কই নাতো কিছু বলিনি।
-- আজকে প্রথম তো তাই বেঁচে গেলেন। না হলে কী যে হতো ভেবে পাবেন না আপনি। যাই হোক ভদ্র ছেলের মত হা করেন।
যত কথা বারাবো ততো কথা বাড়বে তাই চুপচাপ ওষুধ টুকু খেয়ে শুয়ে পরল তাহসান আর নার্স টা চলে গেলো।
নার্সটা কেবিন দিয়ে বেরুতেই বড় করে একটা নিশ্বাস নিল তাহসান।
"আজকে আমার দিনটাই খারাপ গেলো দু'দুটো ডাকতিনীর সামনে পরছিলাম।" তাহসান মনে মনে এগুলো বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতেও পারেনি।
তাহসানকে ওষুধ এর সাথে ঘুমের ওষুধ ইচ্ছে করেই খাইয়ে দেয় দিশা। মিনিট দশেক পরে দিশা তাহসান এর কেবিন এ এসে তাহসান এর মাথার পাশে বসে তাহসান এর ঘুমন্ত প্যাঁচার মত মুখটা দেখছে আর ভাবছে।
"ছেলেটা এমন কেনো.? যে কাউকে তার প্রতি ভাবাতে বেশি সময় নেয়না।
সত্যি খুব অদ্ভুত একটা ছেলে ও। না হলে আমি.? ওকে দেখতে আসবো ইয়ামপসিবল। দিশা তুই আগের মত আর নেই" নিজের মনে মনে বিরবির করতে থাকলো দিশা।
হঠাৎ করেই তাহসান এর ফোনে একটা সিম কোম্পানি মেসেজ দিতেই দিশার নজর ওর ফোনের দিকে চলে গেলো। মোবাইল টা হাতে নিয়ে তার স্ক্রিনএ ওয়ালপেপার সেট করা ছবিটা খুব চেনা চেনা লাগলো। একটা রূপকথার ছবির মত, একটা ছেলে একটা মেয়েকে একটুকরো চাঁদ দিচ্ছে দৃশ্যটা ঠিক এমনি ছিল। তাহসান এর ফোনে কোনো স্ক্রিনলক ও নেই তাই অতিসহজ এই ফোনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলো। মনে মনে ভাবলো দিশা এটা ঠিক না। অন্যের ফোন চেক করা পারসোনাল কিছু তো থাকতেও পারে।। তবে আবার বুক ফুলিয়ে ভাবলো আমি দিশা যা খুশি তাই করতে পারি।
পুরো ফোন গ্যালারী চেক করে তো দিশা সম্পূর্ণ অবাক।.......
কেমন করে সম্ভব এটা.? আজকালকার ছেলের ফোনে শুধু তার আম্মুর নাম্বার & তার নিজের আর আম্মু আব্বুর ছবি ছাড়া আর কোনো ছবিও নেই। ছেলেটা খুব ইন্টারেস্টিং। যখন দিশার চোখ ফেসবুক সফটওয়্যার এর দিকে গেলো। ডাটা অন করে ঢুকবে তখনি তাহসান একটু নড়া দিয়ে উঠলো দিশা তাড়াতাড়ি করে তাহসান এর ফোন আগের জায়গায় রেখে তাহসান এর কেবিন থেকে বাহিরে চলে আসলো। আর ভাবতে লাগলো তাহসান এর কথা। দিশা একটু একটু করে পুরো চিন্তায় তাহসানকে নিয়ে আসলো।
ভাবতেও পারেনি দিশা ওকে এতটা সময় নিয়ে ভাববে। রাত ১০টা বাজে বাসায় এসে পুরো রাত বিছানায় শুয়ে শুধু তাহসান এর কথা ভাবলো। তবে প্রেমে পরার পাত্রী দিশা নয় খুব শক্ত একটা মেয়ে দিশা। ছেলেদের বিরক্ত করেই আসল মজা নেয় সে। কিন্তু আজ সে বিরক্ত হচ্ছে তাহসান এর কারনে। কিছু না করা সত্ত্বেও দিশা বার বার ওর কথা ভাবছে।
সকালবেলা যখন তাহসান এর ঘুম ভাঙে তাহসান এর আম্মুকে ফোন দিয়ে হাসপাতাল এ নিয়ে আসে একটু তাড়াতাড়ি ই। খুব সকালেই নাম কাটিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসে তাহসান। অবশ্য আরো দু'দিন থাকার কথা ছিল হাসপাতালে কিন্তু তাহসান এর মনে ভয় যদি নার্স বা অবন্তী আবার এসে কিছু একটা করে বসে তাহসান এর সাথে মেরে ফেলে তাকে তাই ভয়ে চলে আসছে। এককথা বলা যায় পালিয়ে আসছে ওদের হাত থেকে। বাসায় এসেই তাহসান ফোন অফ করে রেখে দেয়।
দিশা ৯টা বাজে হাসপাতাল এ গিয়ে দেখে তাহসান সেখানে নেই। খুব খারাপ লাগলেও পরে নিজেকে মানিয়ে নেয় শক্ত হয় আরো। চলে যায় ভার্সিটি হাসপাতাল দিয়েই। সেখানে বান্ধুবিদের সাথে আড্ডা গল্প গুজব করেই পার করে দেয়। অবশ্য নতুন একজন দিশার সাথে হাত মিলায়। সে হলো অবন্তী।
গতরাতেই দিশা জানতে পারে অবন্তী তার বাবার বন্ধুর মেয়ে। ছোটবেলা একসাথে পুতুল খেলতো দুজন মিলে। সেটা দিশার আব্বু বললো আর গতরাতে দিশাদের বাসায় ও এসেছিল অবন্তী। ছোটবেলার বান্ধুবি তাকে তো আর দূরে সরিয়ে রাখা যায়না এক হয়ে গেলো দুজন।
যখন দিশা একা ছিল তখনি সবকিছু রাজ করতো এখন তো অবন্তী ও এসেছে তাদের সাথে। দুটো লেডি ডন মানে পুরো ভার্সিটির ছেলেদের জন্য বিপদজনক সতর্ক।
--ওই ওই হলুদ টি-শার্ট এদিকে আয়। (অবন্তী)
-- জ্বী আমাকে বলছেন আপু.? (আরিফ)
-- তুই ছাড়া এখানে আর কে হলুদ টি-শার্ট পড়ে আছে.?
-- কেউ না তো আপু.!
-- তাহলে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলি কেন.?
-- না মানে আপু।
-- ওই না মানে আপু এগুলা কি.? জানিস না বড়দের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়।
আবার আবার ওই ইরার দিকে আড় চোখে তাকাস।.? লাভার নাকি.?
লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে আরিফ সে বুঝতে পেরেছে আর র্যাগিং হবে খুব করে।
এবার দিশা বললো.! আরে বলে ফেল লজ্জা কিশের নতুন বউরা এমন লজ্জা পায়। তবুও মুখ তুলে কিছু বলতে পারলোনা আরিফ।
--আরে ওই লজ্জা বতিকে কি বলি.? ওয়েট এই ইরা এই(অবন্তী)
-- জ্বী আপুরা আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপুরা.? (ইরা)
--অলাইকুম আসসালাম. আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দেখ ছ্যামড়া একই হলো ভদ্রতা শিখ কিছু এখান দিয়ে বড়দের দেখলে কীভাবে কথা বলতে হয়। (দিশা)
-- আপু দেখনা এই ছ্যাচড়া পোলা আমাকে সবসময় ডিস্টার্ব করে কিছু বলো না ওকে.? (ইরা)
- কিহ আমাদের ক্যাম্পাস এ মেয়েদের ডিস্টার্ব করা। ওই শালারে বেধে ফেল তো(দিশা)
-- আপু আপু ওর হলুদ টি-শার্ট টা আমার পছন্দ হইছে(রাত্রি)
-- আরে রাত্রি তুই না। ওই ওর টি-শার্ট খুলে ওকে ছেড়ে দে। আর শোন তুই যদি ইরাকে কখনো ডিস্টার্ব করিস তাহলে পরেরবার কিচ্ছু থাকবেনা বলে দিলাম। বলেই দিশা আরিফ কে ছেড়ে দিলো। দিশা আর বান্ধুবিরা মজা করতে করতে সময় কাটালো আর তাহসান রুমের মধ্যে বসে রোমান্টিক গল্প লিখলো। লেখালেখি যখন করে তার মনের মাঝেও কিছু রোমাঞ্চ জমা হয়ে থাকে। যেটা কাউকে দেখতে দেয়না তাহসান। সবরোমাঞ্চ বউ এর জন্য জমা করে রেখেছে।
দুটো দিন এমনিভাবে কেটে গেলো। রুমের মধ্যে ছাদে কাটিয়ে দিল তাহসান।
ভার্সিটির ১ম ক্লাস ধরার জন্য তাহসান আজ খুব সকালেই রওনা হয় ভার্সিটি।
অবন্তী ভার্সিটি ওর আব্বুর সাথেই তাড়াতাড়ি চলে এসে সবাইকে ফোন দিয়ে আসতে বলে সবাই আসলেও দিশা আসেনি আজ ও বললো একটু দেরি হবে ওর আসতে। আর এও বললো আজ প্রথম যে ছেলে ভার্সিটি ঢুকবে তাকে র্যাগ দিতে। অবন্তী বললো
--কি রকম র্যাগ দিব.? আমি তো এসব বিষয়ে একদমি নতুন।
- শোন যে ছেলেটা প্রথম ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকবে তাকে তোদের কাছে ডেকে নিবি তারপর রাত্রি আর মিথিলা দেখে নিবে যা বলার বলবে আর তুই ওই ছেলেকে বলবি যে গেট দিয়ে যে মেয়েটা আসবে তাকে কিস করতে। (দিশা)
-- মানে..!সোজা কিসস করবে এ কেমন করে হবে.?? (অবন্তী)
-- আরে আমি জানি কোনো ছেলের সাহস নেই ভরা ভার্সিটির মধ্যে বসে কিসসস করতে, তুই শুধু মজা নিবি ওই ছেলের ভিতু মার্কা চেহারা দেখে। করতে পারবি তো.?(দিশা)
-- করতে পারবো মানে.?? (অবন্তী)
-- না এগুলো তো তুই কখনো করিস নাই তাই বললাম।
-- কি মনে করিস নিজেকে দিশা তুই একলাই পারিস আমরা পারিনা। তুই ভার্সিটি আস তারপর দেখিস আমরা কি রকম র্যাগিং করতে পারি।
-- হি হি দেখবো তোরা কীভাবে র্যাগিং করতে পারিস। যদি ঠিকমত করতে পারিস তাহলে ফুসকা ট্রিট আমার তরফ থেকে।
-- ওকে ডান...
বলেই অবন্তী ফোন কেটে দিয়ে বললো আসছে আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে আমি কিছু পারিনা বুঝি।
রাত্রি বললো,
দেখি তুই কি পারিশ। কিন্তু কথা হচ্ছে এখন মাত্র ৮.৪৫ বাজে এখন থেকে আরো ঘণ্টার মধ্যে কোনো ছেলে মনে হয়না ভার্সিটির চৌকাঠ পাড়াবে।
অবন্তী, রাত্রি, নীলা অপেক্ষা করছে একটা ছেলের জন্য কে আসবে আগে। আজ অবন্তীর মানসম্মান এর ব্যাপার নিয়ে,
একটাও ছেলে আসছে না সব মেয়েরা এসে ভার্সিটি ভরে গিয়েছে। প্রায় ২০ মিনিট পর ভার্সিটির গেট দিয়ে একটা ছেলেকে ঢুকতে দেখে অবন্তী একটু নড়েচড়ে বসলো, যাক অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। কিন্তু ছেলেটাকে সম্পূর্ণ দেখে হা করে তাকিয়ে আছে সবাই। ভার্সিটির সবচেয়ে ভিতু ছেলেটার কপাল পুড়লো।
হ্যা তাহসান ছিল সেই ছেলেটা। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিনজন ই ওরা। তাদের মধ্যে রাত্রি বলে উঠলো।
-- দোস্ত তাসুরে র্যাগ দিশনা এমন র্যাগ পেলে ভরে ময়ে যাবে বেচারা। (রাত্রি)
-- ইশ ওই হাবলুটাকে আসতে হলো(অবন্তী)
-- দেখ তোদের ভাব দেখেও কিন্তু অন্য কিছু মনে হচ্ছে কিন্তু। অবন্তী তোর মানসম্মান এর ব্যাপার, আর রাত্রি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ওর দিকে নজর দিশনা .!!(নীলা)
-- যা হবার হবে আজ দেখবো তাহসান কতটা ভিতু। হি হি হি।(মিথিলা)
-- মরে যাবে বইন তাসু মরে যাবে(রাত্রি)
-- তুই চুপ কর।
রাত্রকে চুপ করিয়েই অবন্তী তাহসান কে ডাকতে শুরু করলো।
-- ওই তাহসান এদিকে আয়।(অবন্তী)
তাহসান অবন্তীর কাছে এসে.!
-- জ্বী বলেন। কিছু বলবেন.?
মাথা নিচু করেই কথা গুলো বললো তাহসান।
-- হি হি তোকে এখন যেটা বলবো সেটা করতে হবে না হলে জামা খুলে এখানে দাড় করিয়ে রাখবো।
-- কিহ্.! না মানে আমি কি করবো। আর আপনিও সেই ডাইনির মত শুরু করলেন।
:- চুপ একদম চুপ। এখন যেটা বলি সেটা শোন। র্যাগিং এর নাম তো শুনছিস ই।
র্যাগিং এর কথা শুনে তাহসান এর গলা শুকিয়ে গেলো। কারন তাহসান যানে র্যাগিং এ কোনো সহজ কাজ করতে দেয়না বদমাইশ মেয়ে গুলো কিছুদিন তো নিজের চোখেই দেখলো।
ভয়ে আছে কি না কি করতে বলে তাহসানকে।
-- শোন একটা কথা বললে তোর ইজ্জৎ এর বারটা বাজাবে দিশা সেটা বুঝতেই পারিস। এখন দেগের কাছে গিয়ে দাড়া এখন দিয়ে যে মেয়েটা প্রথম ভার্সিটি তাকে কিস করবি তুই।
তাহসানের অবস্থা দেখার মত ছিল, লজ্জায় চোখ দুটো ছোট হয়ে গেছে, হাটু কাপছে মনে মনে হার্ট অ্যাটাক আসবে মনে হয় এমন অবস্থা হয়ে গেছে তাহসান এর।
গেটের কাছে অপেক্ষা করতেছে তাহসান কিন্তু কোনো মেয়েই ভার্সিটি এখন আর আসছে না। সব ছেলেরা আসছে, ক্রমেই হার্টবীট বেড়ে যাচ্ছে তাহসান এর।
তাহসান এর এমন অবস্থা দেখে, মিথিলা, অবন্তী হাসছে শুধু রাত্রি ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ করেই তাহসান কারো ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁট মিশিয়ে ফোললো।
এটা শিওর ছিল সে একটা মেয়ের ঠোঁটে কিস দিয়ে ধরে আছে আর পুরো ক্যাম্পাস হা করে স্তব্ধ হয়ে গেছে। পুরো নীরবতা। নীলা আর অবন্তীর মুখ হা করে তাকিয়ে আছে কেউ এমনটা একসেপ্ট ও করতে পারেনি। যেটা কল্পনা করা যায়না তাহসানকে দিয়ে সেটা আজ পুরো ভার্সিটির মধ্যে। তাও ভার্সিটির সবচেয়ে রাগি মেয়েটাকে "দিশা" ছিল সেই মেয়ে যার ঠোঁট বন্ধ করে রাখছে তাহসান।
৪৫ সেকেন্ড পর তাহসান দিশার ঠোঁট ছেড়ে দিয়েই ক্লাসে চলে গেলো আর পুরো ভার্সিটির মানুষ স্তব্ধ। দিশা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ভাবছে কি হলো এটা, একদম বাচ্চা মেয়ের মত কেঁদে দিল দিশা।
অবন্তী, নীলা, রাত্রি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দিশার দিকে। কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পরছে না ওরা। তাহসান করলো কি এটা.? তাও দিশার সাথে। ভাবতের মাথা ঘুরাচ্ছে ওদের তিনজনার। পুতুল হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে দিশা। "আয় হায় আমার সব নিয়ে গেলোরে ওই হাবলু মার্কা ছেলেটা, বাদর মার্কা চেহারা নিয়ে থাকে সবসময় ভেজা বিড়াল শালা হনুমান আমার সব নিয়ে গেলো " কথাগুলো বলছে আর কান্না করছে দিশা।
অবন্তী দিশার কাছে গিয়ে বললো।
--দেখ দিশা আমার কিন্তু কোনো দোষ নাই সব তুই করতে বলছিস তেমন আমি করছি..
এ্যা এ্যা করে দিশা আরো জোরে কান্না শুরু করে দিল। সবাই দিশার দিকে কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে এত বড় মেয়ে কেমন করে কান্না করে সবার সামনে।কীভাবে পারে দিশা.?
-- ওই দিশা এমন ভাবে না কান্না করে চল ওই তাহসাইন্নারে মজা শিখাই।(অবন্তী)
-- নারে ওর কি দোষ ছিল নাকি সব দোশ তো তোর আর দিশার (রাত্রি বলে উঠলো অবন্তী কে)
-- ঈশ তোর শরীর জ্বলে কেন.? (নীলা)
-- দেখ ভালো হবেনা বলে দিলাম, তোরা যা আমি একা একা কান্না করি.! আমার সব নিয়ে গেলো, বাদর মার্কা ওই হনুমান টা। ওরে আমি...
দিশাকে থামিয়ে অবন্তী বলা শুরু করলো।
-- চল আব্বুর কাছে নালিশ করে ওকে ভার্সিটি দিয়ে বাহির করে দিব।
-- হু চল ওর এতবড় কলিজা যে আমার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে। ওকে আমি কুচি কুচি করে কেটে কুকুরকে খাওয়াবো। নাহ্ সব রাত্রি বান্দরনিকে খাওয়াবো তাহসাইন্নার চামচিকা।(দিশা)
-- দেখ ডাইনি তুই এমন করে বলবিনা(রাত্রি)
-- তোরে আর কি বলবো, চামচিকা, (দিশা রাত্রির উদ্দেশ্য করে)
-- তোদের ঝগড়া শেষ হলে তাহসান এর ব্যবস্থা করি চল(অবন্তী)
বলেই ওরা প্রিন্সিপাল স্যর এর রুমের বাহিরে আসতেই ভিতরে তাহসান এর কণ্ঠ শুনতে পেলো ওরা সবাই। থমকে দাড়িয়ে ওরা তাহসান আর প্রিন্সিপাল এর কথা শুনতেছিল।
--স্যর আমাকে আপনার ভার্সিটি দিয়ে বাহির করে দেন প্লিজ। আমি যদি ভার্সিটি বেশিদিন থাকি নিশ্চিত আমার হাড় একটাও আমার সাথে থাকবেনা। (তাহসান)
-- তাহসান হঠাৎ তোমার কি হলো এ কথা বলতেছো কেনো.? (প্রিন্সিপাল)
-- না মানে স্যর অবন্তী আপু আজ আমাকে র্যাগিং করেছিল, যা করতে বলছে তাই করেছি আর এটা আমার করা ঠিক হয়নি হয়তো, মনের ভিতর ভয় হচ্ছে স্যর
-- দেখ তাহসান কি হয়েছে খুলে না বললে কিভাবে বুঝবো বলো.? আর সামান্য র্যাগ ই তো দিয়েছি তাতে কি হয়েছে।
-- স্যর সামান্য না, সবচেয়ে ভয়ানক বিপদ এখন আমার উপর দৌড়াইতেছ।
ভার্সিটি ঢোকার সময় আমি দিশাকে.....
বলার আগেই দিশা স্যর এর রুমে ঢুকেই বলতে শুরু করলো।
-- ওই ছ্যামড়া তোর লজ্জা নাই স্যর এর সামনে কিসব আবল তাবল বলতেছি.? তোর মাথায় একটুও কমনসেন্স নেই নাকি। পুরো ভার্সিটি বলে বেড়াচ্ছিস আমাকে কিস করেছিস.?
তাহসান আর ওখানে নেই একদৌড় এ ভার্সিটি থেকে বাহির হয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সায় চেপে বসলো।
--আরে মামনি একটু শান্ত হও।(প্রিন্সিপাল)
-- আঙ্কেল দেখছেন কত বড় সাহস আপনার কাছে এসে কিসব বলছে।
--দেখ এতে ওর তো কোনো দোষ দেখছি না। (দিশাকে বলল) ওই অবন্তী এদিকে আস। আমার মেয়ে বলে যা কিছু করে বেড়াবি ভার্সিটি এসে। তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ডানা গজিয়েছে তোর তাইনা (রাগি কণ্ঠে স্যর)
-- আসলে আব্বু এবার মত ভুল হয়ে গেছে আর হবেনা। (মাথা নিচু করে অবন্তী)
কারন ভয় পায় অবন্তী তার বাবাকে।
স্যর কিছু বলার আগেই ওরা সবাই স্যর এর রুম দিয়ে পালিয়ে চলে আসলো।
একটা নির্জন জায়গায় বসে আছে ওরা।
--রাত্রি ওর বাসার ঠিকানা দে.? (রাগি কণ্ঠে দিশা বললো)
--কেন.? (রাত্রি)
-- দিতে বলছি দিবি সোজা কথা দে বলছি।(এতক্ষণ এ দিশা রক্ত বর্ণ ধারন করে ফেলেছে, চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে রাগে এ দেখে ভয়েও রাত্রি তাহসান এর ঠিকানা দিয়ে দিল। আর দিশা ওর আব্বুকে ফোন দিয়ে সব বললো।
দিশার আব্বু তো দিশার থেকেও রেগে গেছে। আজ তাহসান এর বারটা নিশ্চিত।
এদিকে অবন্তী নীলা রাত্রি অবাক হয়ে আছে, কারন দিশা এমনটা করবে ভাবতে পারেনি। ওর বাবাকে এটা জানাবে।
নীরবতা ভেঙে রাত্রি বলে উঠলো।
--দেখ দিশা তুই এটা ঠিক করিশ নি তোর আব্বু কেমন রাগি সেটা তুই ভালো করেই জানিস,
এখন দিশা পড়ে গেলো মহা চিন্তায় সত্যি ই তো সামান্য ব্যাপার আব্বুকে জানালাম কেনো.? আমি তো নিজেই এ ব্যাপার টা মিটাতে পারতাম।
মন খারাপ করে কাঁদো কাঁদোদো কণ্ঠে, ওদের বললো।
-আমি মনে হয় ভুল করে ফেলেছি তাই না.?
ওরা সবাই একসাথে বললো।
-ভুল মানে চরম ভুল করেছিস, এখন তাহসান এর কি হবে.? একবার ভেবে কাজটা করতে পারতি তুই মাথামোটা।
-আমি আব্বুকে তো এখন ওকে কিছু করতে বারন ও করতে পারবোনা করলে আমার অবস্থা শেষ। বিয়ে দিয়ে দিবে আমাকে।
বলেই আবার কান্না শুরু করলো।
একে নিয়ে আর পাড়া গেলোনা। আজ একেবারে বাচ্চা হয়ে গেলো সব উল্টোপাল্টা করছে।
রাত্রি অবন্তী কানে কানে কানে বললো
"তাসুর এক কিস এ ডাইনি দিশা থেকে বাচ্চা দিশা হয়ে গেছে"
বলার সাথে সাথে দুজন হেসে দিল। তবে দিশার মন খারাপ। তাহসান কে নিয়ে চিন্তায় আছে যদি ওর আব্বু তাহসান এর বেশি কিছু ক্ষতি করে ফেলে। নাহ্ আর ভাবা যায়না। মন খারাপ নিয়ে বাসায় চলে যায় দিশা। ওর এমন উদ্ভট আচারণ দেখে বাকি সবাই চিন্তিত, কি না কি করে বসে দিশা। তবে ওকে এমন উদাস আগে কখনো দেখেনি কেউ। বিকেল হয়ে গেলো দিশার আব্বু এখনো বাসায় আসেনি। ভায়ে ধরেছে দিশার। তাড়াতাড়ি কিছু চিন্তা করে বাসা দিয়ে বাহির হয়ে রাত্রি অবন্তীকে সাথে নিয়ে তাহসান এর বাসায় চলে আসলো। দু'বার কলিং বেল বাজানোর পড় তাহসান এর আম্মু দরজা খুলে দিলে।
--মামনি কারা তোমরা.?(তাহসান এর আম্মু)
--আন্টি আমরা তাহসান এর বান্ধুবি। (দিশা)
-- নাহ্! আমার ছেলের তো কোনো বান্ধুবি নেই। তোমরা কারা সঠিক করে বল.?
- আশলে আন্টি তাহসানের সাথে একটু কথা ছিল দেখা করা যাবে.?
-- না ও বাসায় নেই হাসপাতাল এ।
হাসপাতাল এর কথা শুনেই দিশার চোখের কোণে জ্বল এসে গিয়েছে ছলছল করছে জ্বলে।
-- আন্টি হাসপাতাল এর ঠিকানা.?
-- চলে যাও এখান থেকে। তুমি ই তো সেই মেয়ে তাই না.? এখন আসছো খোঁজ নিতে চলে যাও।
বলেই দরজা আটকে দিল তাহসান এর আম্মু। আর দিশা সেখাই দাঁড়িয়ে কান্না করে দিয়েছে। সত্যি তো আমি কেনো ওর খোঁজ নিতে আসলাম। ওকে তো আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। তা ওর খোঁজ নিতে আসবো কেন।
বাসায় চলে গেলো যে যার মত।
আজ দিশা নিশ্চুপ বকবক করে যে মেয়েটা বাসার সবাইকে মাতিয়ে রাখে সে এখন এতটা শান্ত হয়েছে ঠিকমত কথা বলেনা কি যেন নিয়ে ভাবে সবসময়। মিটমিট করে হেসে উঠে মাঝে মাঝে দিশা। বারবার সে তাহসান এর চেহারাটা ভেসে ওঠে। ৪৫ সেকেন্ড সে কথাটা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেনা দিশা। সেই স্পর্শ। না ভুলার মত। মাঝ রাতে অনুভব করে দিশা। তাহসান তার পাশে বসে আছি আলতো করে চুমু একে দেয় দিশার কপালে।
এমন করে দু'দিন কেটে গেলো নিশ্চুপ দিশা ভার্সিটি যায়নি দু'দিন শুধু কল্পনা করে ফেলেছে তাহসান কে নিয়ে। কষ্ট ও হচ্ছে দিশার। দু'দিন শুধু তাহসান এর কল্পনায় ডুব দিয়ে ছিল দিশা। নিজের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেছে তাহসানকে। শয়নে স্বপনে শুধুই তাহসান।
আজ যখন সকালবেলা সবার সাথে নাস্তা করতে বসলো দিশা তখন তার বাবা দিশাকে বললো।
- শোন মা তুই বড় হয়েছিস বিয়ের বয়স হয়েছে। তাই আমি আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আমি।
- কিন্তু বাবা একবার..
দিশাকে থামিয়ে দিয়ে দিশার আব্বু রাগি চোখে
- আমি কথা দিয়েছি তাকে তার ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে আগামি সপ্তাহে তোর বিয়ে এটাই ফাইনাল।
বলেই দিশার আব্বু নাস্তার টেবিল দিয়ে উঠে চলে যায়। আর দিশা হা করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর আব্বুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস নেই তার।
দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয় দিশা। মনের মাঝে শুরু হওয়া ভালবাসা। প্রকাশ করার আগেই কবর দিতে হল দিশার ভালবাসা.!
মন খারাপ নিয়ে দিশা রুমের মধ্যে নিজেকে আটকিয়ে রাখছে।
তাহসান ও এ দু'দিন ভার্সিটি যায়নি দিশার ভয়ে। আর সেদিন ও দিশার আব্বু তাহসানকে মারেনি। হাসপাতালে একজন বোনের জন্য রক্ত দিতে গেছিলো তাহসান। সেদিনের তার রক্তের জন্য বেঁচে ছিল দু'জন। রুমের মধ্যে তাহসান ফেবুতে গল্প পড়ছিলো তখনি তার আম্মু এসে বললো।
-- তাহসান কাল দুপুরে এয়ারপোর্ট থাকিস তোর আব্বু আসতেছে।
-- কিহ্.? হঠাৎ আব্বু আসছে দেশে কি কোনো কাজ পড়েছে নাকি.?
-- কেনো.? আসতে পারবে না নাকি দেশে। আগে শুনেছি বাবা দেশে আসলে ছেলেরা খুশি হয় তুই চমকিয়ে গেলি যে.?
-- না মানে আব্বু আসলে তার সাথে পুরো শহর ঘুরতে হয় যে তাই।
-- হুম এবার আরো কাজ করতে হবে.!
-- মানে.?
-- কিছুনা তুই পরে বুঝবি।
-- না.! মা বলোনা.?
-- তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুই বলেছিলি একদিন ভার্সিটি বন্ধ দিলেই তোকে বিয়ে করিয়ে দিতে। আর তুই নাও করতে পারবি না আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলি তুই বিয়ে করবি।
তাহসান আম্মুর কথা শুনে বিছানা দিয়ে ঠাসসস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। মাথা ঘুরছে আম্মু তুমি আমারে মেরে ফেলার প্লান ঠিক করেই নিয়েছো।
"হে আল্লাহ্ আমার আম্মু কে একটু সুবুদ্ধি দেও, আম্মু তুমি সবসময় আমাকে জমরাজ এর কাছে পঠাতে চাও তাই না। দেখ মা আমি বিয়ে করবোনা বলছি একবার ও বলছি তো অনার্স কমপ্লিট করে নেই"
তাহসানের আম্মু তাহসান এর কর্মকাণ্ড দেখে মুচকি হেসে বললো তোর বিয়ে এবার দিবই কারন আমি বাসায় একা থাকি তো ঝগড়া করতে হলেও একটা বউ চাই, বলেই চলে গেলো তাহসান এর আম্মু। মাথা ঘুরছে তাহসান এর। আল্লাহ আম্মু তো এবার বিয়ে দিবেই কিন্তু বউ যদি রাগি হয় বা ডাইনি হয় তাহলে আমি শেষ। তাছাড়া ভয়টা তো গল্প পড়েই শুরু হয়েছিল। পড়েছি বাসর রাতে নাকি বউ ফ্লোরে ঘুম পড়ায় তার হাবলু মার্কা স্বামী পেলে। আর আমি তো ভিতুরাজ একদম কাণ্ডজ্ঞান কিছুই নেই। আমার কপালে আল্লাহ একটা অবুজ বউ দিও।
ঠিক তখনি টুং করে তার আইডিতে মেসেজ আসাতে আবারো শুয়ে ফেসবুকিং এ মন দিলো। কিন্তু মনতো আর ফেবুতে বসেনা। স্বাধীন আছি হয়তো কিছুদিন এখন ফেবুতে সময় না দিয়ে একটু ঘুড়ে আসি বিয়ে করলে বউ যদি ডাইনি হয় আমি অকালে জমরাজের কাছে পৌছে যাব।
না আমি এত তারাতারি মরতে চাইনা মনে মনে বিরবির করতে থাকলো তাহসান। গিটার নিয়ে রাত্রিবেলা ছাদে গিয়ে মনের ইচ্ছে মত গিটার বাজাচ্ছে। আর তাহসান এর আম্মু একমগ কফি আর ওর মোবাইল টা দিয়ে আসলো ছাদে তাহসান এর কাছে। তাহসান এর আম্মু জানে ছেলে আজ গভীর রাত ছাড়া বাসায় ঢুকবে না।গিটার বাজাতেও মন চাইছে না তাহসান এর হাতে কফির মগ নিয়ে একটু একটু করে খাচ্ছে আর ফেসবুকে লগইন করতেই দেখতে পেলো দিশার আইডি থেকে একটা পোস্ট। দিশার আইডির নাম ফেইক ছিল & তাতে কোনো ছবিও ছিল না। তাহসান এরও সেইম ফেইক নেম কোনো ছবি নেই।
দিশার আইডির নাম ছিল "স্পর্শে তুমি" সে আইডি দিয়ে একটা পোস্ট।
"কখনো নিজের স্বপ্ন অপূর্ণ ছিলনা.! সব স্বপ্ন পুরোন হলে বুঝি এমনি হয়.? জীবনের সবচেয়ে ভালো স্বপ্নটাকে হারাতে হয়। আজ হারিয়েছি আমি সেই স্বপ্নটাকে, কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে"
সেখানে তাহসান কমেন্ট করল,
"স্বপ্ন" সেটা ঘুমের মাঝেই ভালো মানায়! জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখলে বারবার কষ্ট পেতে হয়"
সাথে সাথে এংড়ি রিয়েক্ট আর একটা মেসেজ দিল। স্পর্শে তুমি নামের আইডি দিয়ে।
:- এতদিন এ একটা পোস্ট এও কমেন্ট করলেন না আজ মন খারাপের সময় শরীর জ্বালানো কমেন্ট মন চাচ্ছে আপনাকে কুচিকুচি করে তেলো ভেজে গরমগরম খেয়ে ফেলি।
আজ একটু মজা নেওয়া যাক ওর সাথে এই মন নিয়ে তাহসান ও রিপ্লাই দিল;
-- রাক্ষসী আপনি.? ওয়াও আমি ডাইনির সাথে কথা বলছি।
দিশা হয়তো তাহসান এর রিপ্লাই আশাকরেনি, তাহসান এর আইডি থেকে রিপ্লাই পাওয়া মাত্রই দিশা রিপ্লাই দিল।
:- উরিম্মা আপনি রিপ্লাই দিলেন.? আজ কি আপনাকে এলিয়েন এ ধরেছে নাকি.? এক্সপেক্ট করিনি আপনার রিপ্লাই।
:- ওহ্! তাহলে ভুল হয়ে গেছে রিপ্লাই দিয়ে। সরি।
:- এই যা সরি বলেন কেনো.? আমি তো ভাবলাম আজও রিপ্লাই পাবো না।
:- আসলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় করে।
:- আর ইউ মেড.? ভয় করবে কেনো.? মেয়েরা কি আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে নাকি.?
:- আসলে তা নয় এমনি। আচ্ছা বাদদেওয়া যায়না এসব.?
:- হুম অবশ্যই। কি করেন.?
:- রাতের আকাশের সাথে কথা বলছি একহাতে কফি অন্য হাতে আপনার সাথে চ্যাটিং করছি। আর আপনি কি করেন.?
:- মন খারাপ নিজের রুমে নিজেকে আটকে রেখেছি।
:- ওহ্!
:- হুম।
:- আচ্ছা কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার মন খারাপের কারন টা জানতে পারি.? যদি কিছু মনে না করেন।।
;- শুনলেও কিছু করতে পারবেন না আপনি। শুধু শুধু মন খারাপ হবে আপনার
:- বলুন না শুনি একটু, আমার মন সবসময় খারাপ থাকে।
:- অনিচ্ছা সত্ত্বেও আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে
:- সামান্য এই ব্যাপার.? আরে এ তো খুসির সংবাদ। এতে মন খারাপ করে থাকলে হয়।
:- বেশি জ্ঞান দিয়েন না তো ভাল্লাগেনা।
:- ওহ্! তাও ভালো, রুমের মধ্যে নিজেকে আটকিয়ে রাখলে কি মন ভালো হবে.?
:- তাইতো ভাবওয়ালা মানুষের সাথে কথা বলছি।
:- সরি আমি ভাব ওয়ালা নই। কাইল্লা মানুষ তাই ভাব নেই আমার
:- কাইল্লা মানুষকে কি দেখতে পারি.?
:- উহু আমি তো ভাব ওয়ালা
:- ধূর,
:- ছাদে আসেন মন ভালো হবে.!
:- একা ছাদে কি করবো বলেন.?
:- কে বললো আপনি একা.? আকাশে কত তারা, তার মাঝে একটা একটা চাঁদ। মন দিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন দেখবেন তারাও আপনার সাথে কথা বলছে। একাকীত্ব মনেই হবেনা আপনার।
:- উহ্! তবুও।
:- আরে চলে আসুন ছাদে। একি আকাশের নিচে আছি তো আর কথা তো হচ্ছেই। আমারো না হয় সময় কেটে যাবে আপনার সাথে কথা বলতে বলতে।
:- আপনার ও মন খারাপ.?
:- জ্বী হ্যা।
:- তা আপনার মন খারাপ কী কারনে.?
:- আমি অকালে মরতে চাইনা তাই।
:- মানে.?
:- বিয়ে ঠিক করেছে আম্মু।
:- আপনার ও বিয়ে ওয়াও তাহলে তো দুজনার কষ্ট টা একি হয়তো।
ওকে ছাদে আসছি।
:- হুম আসেন, কাউকে পছন্দ করে, যদি শুনি তাকে পাবনা তখন খুব কষ্ট হয় জানেন।
:- সেইম আমার জীবনটাও এমন। তা কাকে পছন্দ করেছিলেন আপনি.?
:- ভার্সিটির এক রাগি মেয়েকে। সবসময় লাল হয়ে থাকে। তবে ওকে কল্পনা করি শাড়িতে কতট মায়াবী দেখাবে তাকে। কিন্তু কল্পনা সেটা কল্পনাই ভালো মানায়।
:- হুম।
তারপর দিশা চলে গেলো ছাদে তাহসান & দিশা দুজন খুব আড্ডা দেয় কখন যে সময় চলে গেলো কেউ বুঝতেও পারেনি। মন দুজনার ই ভালো। একটু বন্ধু ও হয়ে গেলো ওরা। দিশা তাহসান এর কাছ দিয়ে পারমিশন নিল মাঝে মাঝে নক করে বিরক্ত করবে দিশা। আর তাহসান এর রিপ্লাই দিতে হবে। যেহেতু তাহসান এর ও ভালো লেগেছে কথা বলে তাই ও না করেনি।
রাত তিনটে বাজে শুভ রাত্রি বলে যে যার মত ঘুমিয়ে পড়ে। তাহসান & দিশা বাস্তবে যেমন ফেবুতে তার উল্টো দুজনেই।
তাহসান সেদিনের কিসের কথা এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারেনা। সেই ঠোঁটের স্বাদ। স্পর্শ। কল্পনার রাজকন্যারর দেখা। কিন্তু তাহসান এর আম্মু কল্পনাটাকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায় তাড়াতাড়ি করে নিজেকে গুছিয়ে তাহসান ওর আব্বুকে নিয়ে আসতে গেলো এয়ারপোর্ট।
দিশার আর মন খারাপ হয়না। বাস্তবতাকে মানতে চাচ্ছে ভার্সিটি চলে গেলো দিশা দৈনিকের মত বান্ধুবিদের সাথে আড্ডা দেয় তবে র্যাগিং বাদ। শপথ করেছে র্যাগিং করবেনা। ভার্সিটও জুরে দিশার চোখ তাহসান কে খুঁজে। কিন্তু তাহসানকে তো পায়না দিশা। বান্ধুবিরা তো মহা খুশি দিশার বিয়ে। এ নিয়ে মজা ফান সব ই হয়।
তাহসান সারাদিন আব্বুকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে সন্ধ্যার পরে আব্বুকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে তার আব্বু বন্ধুর সাথে দেখা করতে যায় একটা রেস্টুরেন্ট এ। সেখানে প্রিন্সিপাল স্যর এবং একটা মধ্য বয়সী মানে আব্বুর বয়সী একজন মানুষ। তাহসান স্যর এর সামনে গিয়ে সালাম দিল স্যর বলে। কিন্তু চমকানোর কথা হলো প্রিন্সিপাল স্যর তাহসান এর আব্বুর ফ্রেন্ড। তাহসানের মাথা ঘুরাচ্ছে তাই হয়তো এত চেষ্টার পরেও তাহসান ভার্সিটি দিয়ে বেরুতে পারেনি। পাশের জনকে চিনিনা আমু নতুন দেখলাম। প্রাক অনেকক্ষণ তাদের সাথে কথা & খাওয়া করে বাসায় ফিরি। আগামি সপ্তাহে বিয়ে তাহসান এর। আব্বু আম্মুর সামনে যেতে পারিনা কেমন যেন লাগে তাহসান এর। সকাল হতেই তাহসানকে ওর আব্বু বিয়ের শপিং করতে পাঠান। মার্কেট এর ভিতর ঢুকতেই unexpected জায়গায় most unexpected মেয়ে তাহসান এর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে। দিশার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। ছলছল করছে তার চোখ।
কিছু বলবে দিশা তাহসান কে.? বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা সে। তাদের মাঝে একটা অদৃশ্য দেয়াল সৃষ্টি হয়ে আছে যা এখন চাইলেও ভাঙতে পারবেনা তারা।
হঠাৎ করেই তাহসান বলে উঠলো।
:- সরি দিশা আসলে সেদিন আমি ইচ্ছে করে করিনি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম পারলে ক্ষমা করে দিও। আর একটা কথা.! মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে শুধু। তুমি যদি পারমিশন দেও তাহলে বলতে পারি।
দিশা তাকিয়ে আছি তাহসান এর দিকে। ছেলেটা বড়ই অদ্ভুত। মন বলছে এখনি প্রপোজ করি। কিন্তু আব্বুর মান সম্মান। সে সবসময় আমার স্বাধীনতা দিয়েছে, এখন তার বিরুদ্ধে আমি এ কাজ করতে পারবোনা।
এ কথা ভেবে তাহসান এর সামনে আর থাকা যাবেনা।
ঠাসসস করে একটা চড় লাগিয়ে দিল তাহসান এর গালে।
:- শালা হারামি লুচ্চার সরদার, বান্দর, তুই পরিস্থিতির শিকার নাকি আমার সাথে ** আমি কি তোকে ওমন মেয়ে মনে হই। যা তুই অন্য কোনো মেয়ের সাথে লাইন মার। দ্বিতীয়বার যদি আমার সামনে আসিস তাহলে তোর কবর দিয়ে দিব। আর হ্যা সরি।
এত মানুষের মধ্যে চড় দেওয়া ঠিক হয়নি।
বলেই দিশা তাহসান এর পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাহসান এর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দিশার মনে হচ্ছে মনটা তাহসান নিয়ে যাচ্ছে। মন রেখে যাচ্ছে তাহসানের কাছে। দু'চোখ বেয়ে পানি ঝাড়ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রাখছে শুধু বাবার কথা ভেবে।
পিছন দিয়ে তাহসান জোর গলায় দিশার দিকে তাকিয়ে বললো।
:- থ্যাংকস চড়টা দেবার জন্য। চড় না দিলে বুঝতাম না তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো। আর হ্যা কখনো কোনো মেয়ের স্পর্শ পাইনি তোমার চড় নিয়ে দুবার ই তোমার স্পর্শ পেয়েছি জানিনা ভুলতে পারবো কি না। তবে অন্য কোনো মেয়ের সাথে ডেটিং মারারর দরকার পরবেনা। পরশু আমার বিয়ে, পারলে দাওয়াতে এসো
বলেই তাহসান চললো শপিং করতে, দিশার চোখ বেয়ে অঝর পানি পড়ছে। কি করলাম আমি.? বাবাকে তাহসান এর বিষয়ে না বললে হয়তো আমি ওকে পেতাম। আব্বু আমাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে ও দিত না। নিজের রাগের উপর ই রাগ হচ্ছে এখন দিশার। বাসায় এসে রুম বন্ধ করে ইচ্ছেমত কান্না করে দিশা। কান্না করলে মন হাললা হয়, তাই কান্না করছে। জন্ম হওয়া ভালবাসা তখনি মৃত্যু হয়ে গেছে। তাই কষ্ট বেশি হবেনা। তবে প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শ ভুলতে কি পারবে দিশা.? মেয়েরা তার প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শ এত সহজে ভোলাতে পারেনা।
তাহসান মন মত শপিং করছে। হঠাৎ করেই অবন্তী & প্রিন্সিপাল স্যর এর সাথে দেখা।
:- আসসালামু আলাইকুম। স্যর কেমন আছেন স্যর।
:-অলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি এখানে কি করছো.?
:- স্যর বিয়ের শপিং,
তাহসান এর মুখে বিয়ের কথা শুনতেই অবন্তী মুচকি হেসে দিলো। সেটা তাহসানের নজর এরাতে পারেনি। তাহসানের মাথা নিচু হয়ে গেছে। লজ্জা লজ্জা লাগছে তাহসান এর।
:- ওহ্.! ভালো। অবন্তী এই হলো তোর শাফী আঙ্কেল এর ছেলে। নাম তো জানিস ই।
:- হ্যা চিনবো না কেনো.? (অবন্তী)
:- তাহসান আমি আসছিলাম অবন্তীকে নিয়ে একটু শপিং করতে। একা একা নাকি ভয় করে ওর। বাচ্চামি করে তো। এখন তোমার সাথে যখন দেখা হয়ে গেলো তখন তোমরা শপিং করো আমি আসি একটু কাজ আছে। আর হ্যা আমাকে স্যর নয় আঙ্কেল বলার অভ্যাস করো।
বলেই অবন্তীর আব্বু ওখান দিয়ে চলে গেলো। তার কথাগুলো তাহসান এর মাথার উপর দিয়ে সব ঝড়ের মতো চলে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
:- তো মিঃ ইনুসেন্ট বিয়ের আনন্দ কেমন হচ্ছে (অবন্তী)
মুখ ফুটে আগেই কথা বলা শুরু করলো অবন্তী। কারন জানে অবন্তী আগে কথা না বললে তাহসান কখনোই আগে কথা বলবেনা।
:- হুহ.! বিয়ে.? আরে এটাকে বিয়ে বলে। এত তাড়াতাড়ি কেউ বিয়ে করে নাকি শুধু শুধু জমরাজ ডেকে নিয়ে আসছে আমার আব্বু আম্মু তার ঘড়ে।
:- আরে পাগল নাকি তুমি। তোমাকে খুব আদর করবে বউ তোমার দেখো।
:- রাখেন আপনি আদরের কথা। যাকে বিয়ে করছি তার চেহারা টাই এখনো দেখা হলোনা,
:- তাহলে দেখে নেও।
:- মানে.?
:- বুঝতে হবেনা তুমি একটা বুদ্ধু।
বলেই অবন্তী হাসা শুরু করলো। অবন্তী তাহলে বুঝতে পেরেছে বিয়েটা কার, লজ্জায় লাল দুজনেই।
:- তাহলে শপিং করা যাক.? তাহসান বলে উঠলো অবন্তীকে।
:- অবশ্যই।
তারপর দুজন মিলে ঘুরেফিরে প্রায় সারাদিন শপিং করলাম, খাওয়াদাওয়া একদম ফ্রি হয়ে যাই অবন্তীর সাথে।
যখন বাসায় আসবো, অবন্তীকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি যাচ্ছি বাসার দিকে তখনি অবন্তী জোর গলায় বললো।
"তুমি বিয়ের আগে যত আনন্দ করে নিতে পারো বিয়ের পরে বউ এর রাগ & তার কাজ করতে করতে জীবন যাবে।" বলেই অবন্তী বাসার ভিতরে চলে গেলো আর আমার মনে সেই বিয়ে না করার ভয় আবার কাজ করতে থাকলো। বিয়ে করলে আমি শেষ।
তবুও বাসায় এসে যে ক'দিন আছে একটু একা কাটিয়ে দেই যতটুকু সম্ভব নিকের সুখ টুকু এখনি কাটাতে হবে। বাসায় এসে একটু ফ্রেশ হয়ে আম্মুকে বললাম আমার ফিরতে দেরী হতে পারে। বলেই বাসার বাহিরে চলে গেলাম। সারা শহর ঘুরে বেরাচ্ছি রিক্সায়, জানিনা কেমন বউ হয়। আল্লাহ আমাকে
আজ ফেসবুক এও ঢুকছে না তাহসান। বাহিরের জগত দেখছে তাহসান অন্যদিকে দিশা বাসায় বন্ধি হয়ে নিজের চোখের পানি ঝড়াচ্ছে।
দুজনার মনেই কষ্ট একজন কাউকে হারানোর কষ্ট আরেকজন নিজের স্বাধীনতা নষ্ট হচ্ছে তাই কষ্ট পাচ্ছে।
সময় এত তাড়াতাড়ি গড়িয়ে গেলো কেউ ই বুঝতে পারেনি। খুব সাজসজ্জা করে তাহসানের বাসা সাজানো হয়েছে। বিয়ে খুব ধুমধাম করে হয়ে গেলো। কষ্টের সময়। সময় ও বুঝে না, রাত ১২ টা বাসর ঘরে বউ অপেক্ষা করছে তাহসানের জন্য কিন্তু তাহসান ছাদে বসে বসে আকাশ দেখছে। আর ভাবছে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের সময় অবন্তীকে দেখতে পাইনি। অবন্তীর আব্বুকেও দেখছি। আর আমার বিয়ে তো আমার আব্বুর বন্ধুর মেয়ের সাথে হওয়ার কথা ছিল তাহলে কি অবন্তী.? না এ কি করে হয়। বুঝতেছিনা। মিনিট খানেক যেতে না যেতেই। আম্মু তাহসানের কান টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিছু বলতেও পারছেনা। কান টেনে একেবারে বাসরঘরে ঢুকিয়ে দিল। লজ্জায় এমনি শেষ তাহসান বিভিন্ন ফুলে সজ্জিত রুমটা। ফুলের ঘ্রাণে মাতাল হবে যে কেউ। বিছানার উপর ঘোমটা টেনে বসে আছে সাধ্য বিয়ে করা বউ। তাহসান বিছানা দিয়ে একটা চাদর নিয়ে নিছে বিছানা করতে লাগলো এটা দেখে নতুন বউ বিস্মিত হয়ে তাহসানের দিকে তাকিয়েই একদম বাচ্চা মেয়ের মত লাফিয়ে তাহসানকে জড়িয়ে ধরলো। মনে হলো হারানো কাউকে খুঁজে পেলে যেমন জড়িয়ে ধরে তেমনি খুব শক্ত করে। মনে হচ্ছে কান্না করে সে.....
তাহসান অবাক হয়ে আছে এমন ঘটনার পরিস্থিতির সামনে পরবে বুঝতেও পারেনি। বাসর রাতে এতটা ফ্রি কীভাবে সে.? আর তাহসান তো তার সাথে কথা পর্যন্ত ও বলেনি তাহলে.? লজ্জায় তাহসান কথাও বলতে পারছে না।
তবুও তাহসান লজ্জাজড়িত কণ্ঠে বললো,
:- কি করছেন আপনি.? লজ্জা করছে আমার।
:- ছেলেদের লজ্জা আছে নাকি হাবলু।
:- দেখেন আমি হাবলু না। জীবনে মেয়েদের সাথে যেটুকু কথা বলছি হাটু কাঁপছে আর আপনি তো আমাকে জড়িয়ে রাখছেন। বিশ্বাস করেন যদি এখনো না ছাড়েন তাহলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক আসবে।
:- হি হি তোমায় জড়িয়ে থাকলেই হার্ট অ্যাটাক আসে তাহলে এখন কি হবে.! বলেই তাহসান এর উপরের ঠোঁট তার ঠোঁট দ্বারা আটকিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো তাহসান চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে তাহসানের। তাহসান দ্বিতীয়বার কারো স্পর্শ পেলো যা অনাকাঙ্ক্ষিত। কল্পনাও করেনি তাহসান।
দু'মিনিট আটকে রেখে ছোট্ট করে তাহসানের ঠোঁটে হালকা করে একটা কামড় দিয়ে দেয় সে। শিউরে উঠেই তাহসান তাকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপরে ফেলে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফ্লোরে। বিছানায় নিজেকে ঠিক করে নিয়ে সে।
:- এই তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে বসো। (সে)
:-... (নিস্তব্ধ হয়ে তাহসান দাঁড়িয়ে আছে চোখ দুটো বড় বড় করে।)
:- ওই তোমাকে কিছু বলছি আমি। কানা নাকি তুমি এখানে বসো।
তার পাশে হাত রেখে দেখিয়ে দিচ্ছে তাহসানকে তার পাশে বসতে।
তাহসানের কোনো জ্ঞান নেই এখানে হারিয়ে রয়েছে অজানা কোথাও।
:- দেখো তাহসান তুমি কিন্তু একটু বেশি বেশি করতেছো। তুমি যদি এখন এখানে না বসো তাহলে কিন্তু তোমার মিষ্টি ঠোঁট দুটো কামড় দিয়ে ছিড়ে ফেলবো বলে দিলাম।
তাহসান কামর এট কথা শুনে লাফিয়ে উঠলো। কিহ্ আবার যদি কামড় দেয় তাহলে তাহসান শেষ। যেমন কাণ্ড শুরু করলো। একটা অচেনা মানুষকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে যার বাধেনা তার কাছে ঠোঁট ছিড়ে নেওয়া সেটা দু সেকেন্ড এর ব্যাপার। মনে মনে এগুলো ভাবতে ভাবতে তাহসান তার পাশে গিয়ে বসলো। আর সে তাহসানের শরীরে সাথে একদম মিশে এসে বসলো।
:- দেখুন এসব ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমার কেমন যেন লাগছে। (তাহসান)
:- আমার তো ভালোই লাগছে, দুষ্টু হাসি হেসে সে।
:- দেখুন আপনি কিন্তু একটু বেশি করে ফেলছেন, আমি জানি বাসরঘরে কোনো মেয়ে এমন কে করেনা।
:- উহু কে বলছে তোমাকে এমন করেনা.? আমি তো জানি বাসরঘর এ বর তো এমন ভিতু হয়না। সে আসে বাসরঘর এ তারপর তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করে তার চেহারা দেখে সারারাত গল্প করে। বাসরঘর এ মেয়ে তার স্বামীর কোলে মাথা রেখে তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বুনে। আরো কত কি।
:- আমি ওসব ছেলেদের মত না। একটু আলাদা।
:- তাহলে আমিও তো সব মেয়েদের মত না, অনেকটা আলাদা। তোমার কাছ দিয়ে কীভাবে আমার অধিকার আদায় করে নিতে হবে আমি জানি।
:- মানে.? জোর খাটাবেন.?
:- নাহ জোর খাটাবো না আদায় করে নিবো।
:- জোর খাটাবেন না তো কীভাবে আদায় করবেন।
:- হি হি (দুষ্টু হাসি হাসছে সে,)
:- আচ্ছা আপনার ঘোমটা টা একটু খুবেন.? না মানে শত হলেও...
তাহসানের কথা শেষ না করতে দিয়ে সে বললো।
:- তুমি ই খুলে দেখো, ঘোমটাপরা একটা পেত্নী তোমার পাশে বউ সেজে বসে আছে।
:- আমি পারবোনা। তাহলে এমনি থাকেন সবসময়।
:- ওকে।
:- ওকে মানে.? আরে আমার হাত কাপছে প্লিজ আপনি ঘোমটা টা সরান না হলে আজ সারারাত ঘুম আসবে না।
:- বুজছি তুমি লুল টাইপের ছেলে।
:- লুল টাইপের মানে.?
:- সবার মাঝে ভদ্র সাজো আর ভিতরে একটা বদের হাড্ডি।
:- কিহ্.! দেখুন আপনাকে দেখার ইচ্ছে আমার নেই। তবুও মন বললো শত হলেও বউ। দেখতে তো বারন নেই। কিন্তু আমার সাহস হচ্ছেনা আপনার ঘোমটা সরানোর।
:- ওকে আমার লজ্জাবান স্বামী আমি ই ঘোমটা সরাচ্ছি।
বলে সে তাহসান এর গাল দুটো ধরে তার দিকে ফিয়িয়ে ঘোমটা ফেলে দিল।
ঘোমটার আড়াল দিয়ে বেড়িয়ে আসলো লজ্জায় রক্তবর্ণ ধারণ করা এক লাল পরি "দিশা" গাল দুটো রক্তবর্ণ হয়ে আছে এতে ওর রূপ দ্বিগুণ বেড়ে রয়েছে।
তাহসান দিশার দিকে কিছু মুহূর্ত তাকিয়েই দিশার কোলে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
এটা দেখে দিশা হাসবে না কান্না করবে ভাবতে পারছে না। এতরাতে কাউকে ডাকাও সম্ভব না। টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের পানি তাহসানের মুখে ছিটিয়ে দেয় দিশা। দু মিনিট পর তাহসানের জ্ঞান ফিরলে দেখে তাহসান দিশার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আর দিশা তাহসানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
:- এই এই কি করছেন আপনি.?
:- পিচ্চি বরকে আদর করছি।
:- দেখেন আমি পিচ্চি না, যথেষ্ট বয়স হয়েছে।
চোখ বড় বড় করে দিশা বললো
:- ওই তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো কেন.? আমি কি তোমার বড় নাকি। মাথা মোটা।
:- না মানে।
:- না মানে না তুমি করে বলবে বুঝেছ। আর আমি যা বলবো তার বিপরীত কিছু হলে তোমার বারটা বাজাবো।
:- আমার ভয় করছে আপনাকে তুমি করে বলতে। দুটো চড় খেয়োছিলাম ভার্সিটি বসে।
:- এই তুমি না আসলে একটা পাগল। যাও মারবো না। এবার হয়েছে.?
:- আচ্ছা তুমি করে না বললে কি হবে.? সবাইকে তো আপনি করেই বলি আমি।
:- ওই হারামি তোরে বলছি তুমি করে বলতে তুমি করে বলবা। ব্যস।
:- আচ্ছা তুমি করেই বলবো। এখন সাইট দেও ঘুমাবো।
:- ঘুমাবা মানে.? মাথা ঠিক আছে তোমার.? একদম খুন করে ফেলবো তোমাকে আর একবার ঘুমানোর কথা বললে।
:- তাহলে আমি কি করবো। তুমি তো যে বদমেজাজি।
:- কিহ্ আমি বদমেজাজি.? দাড়াও
বলেই ঝাপিয়ে পড়লো তাহসানের উপর। দিশার ধাক্কা সামলাতে না পেরে তাহসান পড়ে গেলো বিছানার উপর আর দিশা তাহসানের উপর।
দুজনার চোখ একহয়ে আছে দিশা তাহসানের চোখের দিকে আর তাহসান দিশার চোখের দিকে একটু সুখ খুঁজছে।
নিজের অজান্তেই তাহসানের হাত দিশার কোমড় শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
:- কি খুঁজছো চোখের মাঝে.?(তাহসান)
:- আমাকে খুঁজছি (দিশা)
:- পেয়েছ কি.?
:- না পাইনি। গাধার চোখে আমি হারাতে চাইনা।
:- এই গাধা কি করলে, তুমি তার চোখে তোমাকে পাবে।
:- উমম জানিনা।
:- তাহলে কখনো খুঁজে পাবেনা এই চোখে নিজেই নিজেকে।
:- খুন করে ফেলবো তোমাকে।
:- আমি এমনি মরে গিয়েছি তোমার প্রেমে প্রথম স্পর্শে।
:- শুধু.....
দিশাকে থামিয়ে দিয়ে তাহসান বললো।
:- চাঁদ দেখবে.?
:- উম চাঁদ দেখবো কীভাবে.?
দিশার উত্তর শুনে তাহসানের মনে হলো দিশার উত্তর হ্যাঁ, তাই শোয়া থেকে তাহসান উঠে দিশাকে কোলে তুলে নিল। যেটায় দিশা একদম শকট। দিশা ভাবেনি হাবলু মার্কা ছেলেটা এতটা রোমান্টিক হয়ে উঠবে মুহূর্তেই।
কোলে নিয়ে ছাদে চলে গেলো তাহসান। পুরা বাড়ি বিভিন্ন আলোকসজ্জায় সসজ্জিত ছাদ ও বাকি নয়। বিভিন্ন কার্লারের বাতি জ্বলছে তার মাঝে একটা পরিকে নিয়ে ছাদে উঠলো তাহসান। ঝুলন্ত দোলনায় দিশাকে রেখে তাহসান ও পাশে বসলো, একদম শরীরে সাতে মিশে। হাত দিয়ে দিশার মাথার চুলগুলো মেলে দিলো তাহসান। মৃদু বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে তাহসানের মুখে পরছে আর তাহসান চুলের ঘ্রাণে মাতাল হচ্ছে। সেই মুহূর্ত দিশা চুল গুলো কানের ফাকে গুজে দিচ্ছে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে দিশার দিকে। অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে দিশাকে। সামান্য রাগি তবে খুব মায়াবী। ভালবাসতে ইচ্ছে জাগছে তাহসানের।
তাহসানের চাহনিতে লজ্জায় লাল হয়ে আছে দিশা।
:- কি দেখছো এমন করে.? (দিশা)
:- এক মায়া পরীকে,
বলেই তাহসান দিশার চুলের মাখে মুখ গুজতেই।
:- ওই খবরদার একদম কাছে আসবেনা এখন। চাঁদ দেখতে এসেছি চাঁদ দেখবো।
দিশা তাহসানের কোলে মাথা দিয়ে আকাশের প্রাণে তাকিয়ে আছে আর তাহসান দিশার চোখের দিকে। আকাশের চাঁদ ও যেনো দিশার কাছে হার মানবে তার রূপ নিয়ে। দিশার মধ্যে মাঝে মাঝেই হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাহসান। আলতো করে কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে তাহসান আবার আকাশের তারা গুনতে শুরু করে। না হলে দিশার প্রেমে পড়ে যাবে।। দিশা তাহসানের এমন কাণ্ড দেখে মুচকি মুচকি হেসেই দিলো। অনেকটা সময় ছাদে কাটানোর পর, আবারো তাহসানের কোলে করে রুমের মধ্যে ফিরে গেলো তারা।
সারাদিন বিভিন্ন ভাবে কাটিয়ে আজ ক্লান্ত লাগছে দিশার, তাহসানের ও কম না। রুমে যাওয়া মাত্রই বিছানায় শুয়ে পরলো তাহসান। আর খুঁজছে তার কোলবালিশ। তাহসানের এমন করে কি খুঁজতেছে তা জানতে দিশা বললো।
:- এই কি খুঁজতেছো.?
:- আমার কোলবালিশ টা খু্জে পাচ্ছি না।
:- কিহ্.? কি বললা.? কোলবালিশ.? কোলবালিশ দিয়ে কি করবা শুনি.? মাথা ফাটিয়ে দিব বললাম, চোখের সামনে জ্বলয্যান্ত একটা কোলবালিশ দাঁড়িয়ে আছে আর তুমি।
:- না মানে তোমার মুখ দিয়ে শুনতে চাইছিলাম। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারবো কি না।
:- পাজি মার্কা কথা ভালই শিখেছ।
:- একটু শিখতে হয়। যেগুলো না জানি তুমি শিখিয়ে দিলেই হবে।
দিশা কথা বাড়াতে যাবে তখনি তাহসান দিশাকে এক টানে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলো।
:- কোনো কথা নয় খুব ক্লান্ত লাগছে তোমাকে বুকের মাঝে নিয়ে নিজের ক্লান্ত ভারা দিনটাকে স্মৃতিময় করে রাখতে চাই।
:- উহু...
দিশাকে আর বলতে দিলোনা তাহসান, বুকের মাঝে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। দিশাও তাহসানের বুকে মাথা রাখতেই পরম সুখে ঢুব দিয়েছে।
সকালবেলা তাহসান চোখ খুলে দেখলো দিশা ঘুমিয়ে আছে তাহসানের বুকের মাঝে, নিষ্পাপ একটা বাচ্চা মেয়ের মত দেখাচ্ছে ওকে। মায়াবী লাগছে দিশাকে। ওর কপালে হালকা করে একটা চুমু দিতেই দিশা একটু নড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাহসানকে। তাহসান কিছুসময় পর আবার শুয়ে পরলো। ঘুম ভাঙলো দিশার ভেজা চুলের পানি দিয়ে......
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দিশার দিকে তাহসান। কিন্তু কিছু বলার সাহস হচ্ছে না তাহসানের। নিজের বিয়ে করা বউ এর দিকে তাকাতেও লজ্জা করছে তাহসানের। কিন্তু মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটতেছে তাহসানের। কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করছে না সেটা। বাহিরে একটা নিরিহ ছেলে মাত্র তাহসান কিচ্ছু বুঝে না সে। তাহসানের চোখে মেলতে দেখে দিশা বললো।
:- তাড়াতাড়ি উঠো আম্মু ডাকছে নাস্তা করার জন্য।
এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তাহসান দিশার দিকে। তাই দিশার কথায় মনযোগ দিতে পারেনি। বাধা দিচ্ছে তার রূপ। রূপের মাঝে হারিয়ে গেছে তাহসান। দিশা তাহসানের বাহু ধরে দাক্কা দিয়েই আবার বললো।
:- কি হয়েছে তেমার.? শুনছো আমি কি বলছি.?
:- উহু কি বলছো.?
:- আম্মু ডাকছে নাস্তা করার জন্য। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠো।
:- আর একটু ঘুমাই তার পরে যাব। আম্মু জানে এত তাড়াতাড়ি আমি উঠি না।
:- কি বললে আবার বলোতো.? উঠবে না কি যেন.?
:- একটু পরে...
:- তোমার সাহস তো কম না তুমি আবার বলো পরে উঠবে। ওয়েট বলেই দিশা বাতরুম দিয়ে একমগ পানি নিয়ে এসে তাহসানের শরীরে মারতে গিয়েই নিজে পা পিছলে তাহসানের উপর পড়ে গেলো।দিশা তাহসানের বুকের উপর। সেই সুযোগ এও তাহসান দিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
:- এই এই কি করছো কেউ দেখবে তো..(দিশা)
:- উহু কেউ দেখবে না। (তাহসান)
:- বলছে তোমাকে দেখ ছেড়ে দেও আমাকে। রুমের মধ্যে কেউ চলে আসবে দরজা খোলা তো।
:- উহু আমার রুমে কেউ আসেনা।
ঠিক তখনি তাহসানের আম্মু দরজায় টোকা দিতেই দিশা তাকিয়ে দেখে শ্বাশুড়ি মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে তাহসান দিশাকে সরিয়ে বাতরুমে ঢুকে গেলো আর দিশা একপাশে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কিছু না বলে তাহসানের আম্মু একটা মুচকি হেসে চলে গেলো দিশা তো পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। নাস্তার টেবিলে বসে আছে সবাই। তাহসান দিশার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। কিছু বলবে আম্মু আব্বুর সামনে বলতেও পারছে না। সুযোগ খু্জছে সে। খাওয়া শেষ করে রুমের মধ্যে চলে যায় দিশা। বিয়ে বাড়ি হলেও তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন নেই বাসার মধ্যে। তাহসান ছাদে গেলো, এখন রুমের মধ্যে যেতে কেমন যেনো লাগে তাহসানের।
রুমের মধ্যে একা একা বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি দিশা। তাই শাশুড়ি আম্মার কাছে গেলে দেখে তাহসানের আম্মু আব্বু বাহিরে কোথাও যাচ্ছে, এতে আরো মন খারাপ হয়ে গেলো দিশার একলা ঘরে কি করবে সে। তাহসানের আম্মু বাসা দিয়ে বাহির হওয়ার আগে দিশার কানে কানে বলে গেলো। আমার পাগল ছেলেটা ছাদে আছে। ডেকে নিও। বলেই একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
তাহসানের আম্মু আধুনিক রসিকতার মানুষ, তাই সবসময় রসিকতা করে। দিশার একটু খারাপ লাগলেও কিছু বলেনি আম্মুকে। এও বলে গিয়েছে রাতে তারা ফিরবেনা । নিস্তব্ধ রুমে বসে বসে ভয় লাগছিলো দিশার। পুরো বাসা হেটে হেটে দেখছে সে। তাহসানের রুমে এসে টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলো ওর ল্যাপটপ টা ওখানেই রাখা আছে। তার আগে দিশা ওর বান্ধুবিদের ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে আসছে। সারাদিন না হলে একা একা বোর হতে হবে। তাহসান রুমে আসবেনা সেটা দিশা বুঝে গিয়েছে।
ল্যাপটপ অন করে দিশার ফেসবুকে লগইন দিয়ে তাহসানের একটা ছবি প্রো-পিক দেয়। না হলে দৈনিক হাজারো মেসেজ দিশার মাথা খারাপ করে দেয়। তাই নিজের স্বামীর (মানে তাহসানের) ছবি প্রো পিক দিয়ে দিলো। ক্যাপশন ছিল।
"হারাতে হারাতে পেয়েছি তাকে"
সুখি হয়েছি আমি।
কষ্ট গুলো মুছে ফেলেছি
জীবনের ডাইরি থেকে
বাকী জীবনের পথচলা
চলতে চাই দুজন।
মন খুলে হাসতে চাই
থাকতে চাই পাশে আজীবন
তারপর ই বেরিয়ে গেলো আইডি থেকে। দিশার বান্ধুবিরা চলে এসেছে গল্প করতেছিল তার মাঝে দিশা একটু রান্না করে নিল। নতুন বউ এসেই রান্না করে। একটু অদ্ভুত মনে হলেও রান্না করে তার স্বামীকে খাওয়ানোর মজাই আলাদা। তাই হয়তো তাহসানের আম্মু ওদের একা রেখে বাহিরে গেলো। দুপুরে তাহসান বাসায় এসে দেখে পুরো বাসা নিশ্চুপ, আম্মুকে খুঁজে কোথাও না পেয়ে তাহসান নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো দিশা আর তার বান্ধুবিরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাহসানকে দেখেই সবাই একটু মুচকি হাসি দিল। তাহসান বুঝতে পারেনি কি হচ্ছে। পাশ দিয়ে দিশা রক্তবর্ণ ধারণ করছে রাগে।সারাদিন বাসায় একা ছিল দিশা, এর কিছু একটা তো করতে হবে।
"অবন্তী তোরা খাবার টেবিলে যা তো একটু, ওর সাথে একটু কথা আছে" বললো দিশা। দিশার কথা শুনো বাকিরা টিটকারি মারতে শুরু করতে করতে বেড়িয়ে যাওয়া মাত্রই দিশা রুমের দরজা আটকে দিয়ে তাহসানের দিকে এগিয়ে আসছে। চোখ দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে। এতে দিশাকে অসম্ভব মায়াবী দেখাচ্ছে।
:- কোথায় ছিলে এতক্ষণ.? আমি বাসায় একা একা কতটা ভয় পেয়েছি তুমি জানো.?
:- না মানে আম্মু তো ছিল বাসায়।
:- তোমার আম্মু.? সে তো আমাকে একা রেখে বাহিরে চলে গেলো আব্বুর সাথে আমার কতটা ভয় লাগছিল তুমি জানো। তুমি তো বাহিরে খুব ভালোই ছিলে।
:- না মানে আসলে।
কথা বলতে বলতে তাহসানের পিঠ দেয়ালে আর দিশা এসে তাহসানের শার্টের কলার্ট ধরে ফেলছে
----------------------------------------------
রুম দিয়ে বাহির হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে আসছে দিশা তাহসান। কিন্তু ততোক্ষণ এ অবন্তীদের খাওয়া শেষ। অবন্তী এসে দিশাকে নিয়ে পাশের রুমে এসে কি যেন বললো তারপর চলে গেলো ওরা নিজ বাসায়,
এদিকে দিশার গাল দুটো লজ্জাবতী হয়ে আছে তাহসানের মন বলছে একটু কামড় দিয়ে দিতে দিশার গাল দুটোতে। কিন্তু কামড় দিলে দিশা তাহসানের গালের মাংশ তুলে ফেলবে। তাই নিজেকে কন্ট্রোল করে খাবার দিতে বললো দিশাকে। দিশা এক প্লেটে খাবার বারতেই তাহসান বললো,
:- এক প্লেট কেনো.? তুমি খাবে না.? (কিন্তু মনে মনে তাহসান চাচ্ছে দিশা খাইয়ে দিক তাহসানকে। আর তাহসান দিশাকে)
:- আমিও খাবো, তবে এক প্লেটে দু'জন।
:- মানে এক প্লেটে দুজন কীভাবে.?
:- কথা বলবেনা তুমি দেখ কীভাবে খাওয়া করে। বলেই দিশা তাহসানেরর সামনে বসলো বসে খাইয়ে দিচ্ছে তাহসানকে। তারপর তো তাহসানকে শিখিয়ে দিতে হবেনা। মন থেকে বেশ রোমান্টিক তাই একটু অন্যরকম চিন্তা করে সবসময় তাহসান।
খাওয়া শেষ করে রুমের মধ্যে বসে আছে দুজন, দিশা বিছানার উপর শুয়ে তাহসানের ল্যাপটপ দখল করে আছে আর তাহসান দিশার পিঠের উপর মাথা দিয়ে মোবাইল নিয়ে আছে।
হঠাত করেই দিশা বললো।
:- এই তোমার ফেসবুক নাম কি.? & নাম্বার / জিমেইল পাস দেও।
:- আআআমার.??
দিশার মুখে ফেসবুক কথাটা শুনে চমকিয়ে উঠলো তাহসান, কিন্তু কেউ জানেনা তাহসান ফেসবুক চালায় কি না। জানবে কীভাবে ওর ছবি বা না কোনোটাই তো ফেসবুকে নেই।
:- হ্যা তোমার।
:- আমার তো ওসব একাউন্ট নেই, ওসব দিয়ে কি করে..? (শালা তাহসাইন্না লুচুর হাড্ডি ডাহা মিছা কথা বললো মাত্রই। এসব দিয়ে কি করে না বুঝার ভান ধরলো কিন্তু ও যে এসবের হেড-মাস্টার। সারাদিন ফেবুতে লুচু গিরি করে আর এখন বলে ও এসব কি জানেই না।)
:- কিহ্ অবাক চোখে দিশা তাহসসনের দিকে তাকিয়ে বললো, "আজকালকার ছেলে আর তোমার আইডি নেই" হাউ ফানি.!!
:- না মানে আসলে হচ্ছে।
:- আসলে কি.?
:- না মানে কি করে বলবো তোমায়.? ভয় করছে যদি তুমি হেসে দেও।
:- পাগল নাকি তুমি.?? আমি হাসবো কেনো.?
:- না আসলে আমার আইডি হচ্ছে একটা ডাস্টবিন এর মত তাই প্রথমে মিথ্যে বলেছি, আইডি আছে তবে বেশি একটা ভালো না।
:- তোমার চুলগুলো টেনে আমি তোমাকে ন্যারা করে দিবো। বুঝলা। আইডি দেও আগে।
এতক্ষণ এ তাহসান দিশার চুলের পাশ দিয়ে কাধে মাথা রেখে দিশার আইডি দেখছে তার ল্যাপটপ এর স্ক্রিনে। দিশার আইডিতে তাহসানের নিজের ছবি দেখে কিছুটা অবাক।
:- আআআমার ছবি তোমার প্রোফাইল এ.? অবাক চোখে তাকিয়ে দিশা বললো,
:- এইতো সকালে দিয়েছি।
:- ওহ গুড।
আইডি দেখে তাহসান চিনতে পারে এ তো সেই পাগলি। পাগলি টাইপের কমেন্ট করে ভরে ফেলতো তাহসানের লেখায়।
:- তোমার আইডি দেও।
:- আমি এখন তোমাকে দিব না, রাতে দিব।
:- রাতে দিবে.? না এখন দিবে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাহসান কিছু না বলে দিশাকে তৈরি হতে বললো কোথায় যেনো নিয়ে যাবে তাহসান দিশাকে।
দিশা কিছুটা অবাক হলেও কিছু বলেনি সামান্য একটু সেজে তাহসানের সাথে বাহির হলো। তার আগে দিশাকে বললো আমরা যেখানে যাব সেখানে বসেই তোমাকে সারপ্রাইজ & আমার আইডি পাসওয়ার্ড সব কিছু দিয়ে দিব। দিশাও রাজি। হাটতে হাটতে একটা নির্জন রাস্তায় চলে আসলো দুজন। হঠাত করেই দিশাকে কোলে তুলে নিল তাহসান। ভদ্র ছেলে এখন রোমান্টিক মুডে চলে এসেছে। দিশা এটাই চেয়েছিল তাহসান দিশাকে এমন কিছু একটা করুক, কোলে তুলারর আগে দিশার চোখ বেধে দিয়েছে সারপ্রাইজ দিবে তাই। দিশা যখন চোখ খুললো নিজেকে একটা অদ্ভুত কল্পনার রাজ্যে আবিষ্কার করলো। জোছনার আলোতে বুঝা যাচ্ছে ওরা এখন একটা নদীর মাঝে মাঝারি একটা নৌকায়। নিস্তব্ধ পরিবেশ চাঁদ তার রূপের ঝলক দিয়ে এই মায়াবী মুহূর্তটাকে আরো মধুর করে তুলছে। নৌকাটায় শুধু তাহসান আর দিশা। মাঝি তার ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে তীরে চলে এসেছে, ফুল & বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জায় এক অপরূপ দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।
দিশার সামনে তাহসান হাটু গেড়ে সাতরঙা সাতটি গোলাপ নিয়ে বসে আছে।
"তুমি এত মায়াবী কেন.? তুমি কি মায়া যান.? তোমার মুখের কোণে ওই দুষ্টু হাসিতে কি যাদু আছে.? যে প্রতিনিয়ত আমাকে তোমার মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে। আমি তো কল্পনায় তোমাকে দেখি তখন থেকেই যখন থেকে প্রথম স্পর্শ পাই তোমার। ভাবতে পারবে তুমি.? আমি তোমাকে কতটা জুরে চেয়োছি.? হয়তো না। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার মনের প্রতিটা কোণে শুধু তুমি। তুমি চেয়োছিলে আমার কাছে কিছু জিনিস। তুমি এখন আমার তোমাকেই আমার মনের পাসওয়ার্ড করে নিয়েছি তিন কবুল বলে। সেদিন ভালবাসার কথা মন খুলে বলতে পারিনি। আজ বলি কারন এখন তোমাকে আর হারানোর ভয় নেই। ভয় নেই আর। বাধা নেই তোমাকে ভালবাসতে। এখন ভালবাসা টা পবিত্র। কথা দিচ্ছি তোমার সব রাগ আমি সহ্য করে নিব। তোমাকে আমার ভালবাসাটা সহ্য করতে হবে। ভালবাসি একবার বলো দেখো তোমার জন্য আকাশের চাঁদ হয়তো নিয়ে আসতে পারবোনা। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত সুখ ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে পারবো।
ভালবাসি তোমাকে, বাকিটা জীবন তোমাকেই ভালবাসবো।
দিশা তাহসানের হাত দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা তার মনের সমস্ত উত্তর আজ খুঁজে পেয়োছে। তাহসান দাঁড়াতেই দিশার দু'পা এগিয়েই তাহসানের পায়ের উপর পা রেখে তাহসানের মুখের বরাবর হয়ে বললো ভালবাসি। খুব বেশি। হয়তো তোমার মত পারবো না, তবে তোমার থেকে কম হবেনা। দুজনার কপাল দুটো একসাথে মিশে আছে চারদিকের হালকা ঠাণ্ডা বাতাসের উঞ্চতায় দুজন এক হয়ে গেছে এক পবিত্র বন্ধনে।
(সমাপ্ত)
সংগৃহিত. .......( মহিউদ্দীন মামুন )
Comments
Post a Comment